প্রাইমা দুধের উপকারিতা - প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
নবজাতকের জন্য প্রাইমা দুধের উপকারিতা বলে শেষ করার মত নয়। শিশুর জন্য প্রাইমা দুধ সবচেয়ে বেশি উপকারী। শিশুকে প্রাইমা দুধ খাওয়ানোর জন্য প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম জানা প্রয়োজন। আজকের আর্টিকেলটিতে প্রাইমা দুধ সম্পর্কে প্রত্যেকটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর সম্পর্কে থাকছে বিস্তারিত।
প্রাইমা দুধ শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শিশুদের শরীরে সুষম পুষ্টি প্রাইমা দুধের উপকারিতা। প্রাইমা দুধে থাকে বেশ কিছু উপাদান যা শিশুর শারীরিক বিকাশে সাহায্য করে। প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম, খাওয়ার বয়স, বানানোর নিয়ম, কোন দেশের কোম্পানি, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ প্রাইমা দুধের উপকারিতা - প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম
.
প্রাইমা দুধের উপকারিতা
নবজাতক জন্মের পর মাতৃদুগ্ধ পান করে। কিন্তু বেশিরভাগ গর্ভবতী মা সন্তানের চাহিদা মত দুধ পান করাতে পারেন না। ফলে শিশু শারীরিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে। শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এ সকল সমস্যা দূর করতে চিকিৎসক ফর্মুলা দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। বাংলাদেশে ফর্মুলা দুধ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ও প্রথম স্থান দখল করে আছে প্রাইমা দুধ।
প্রাইমা দুধ শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রায়মা ১ ও ২ বাজারে পাউডার দুধ হিসেবে পাওয়া যায়। এই দুধে রয়েছে বেশ কিছু ভিটামিন উপাদান যা শিশুর শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রাইমা দুধের উপকারিতা বলে শেষ করার মত নয়। নিচে প্রাইমা দুধের উপকারিতা গুলো পয়েন্ট আকারে দেওয়া হলঃ
- শিশুর পূর্ণ পুষ্টি নিশ্চিত করে
- মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে
- হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে
- ভিটামিন এ, সি, ডি সরবরাহ করে
- শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক
- মাতৃদুগ্ধের চাহিদা পূরণ করে
শিশুর পূর্ণ পুষ্টি নিশ্চিত করেঃ প্রাইমা দুধে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেল সহ শিশুর জন্য প্রয়োজনে সাবধানে পুষ্টি উপাদান থাকে, যা শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করেঃ প্রাইমা দুধের উপকারিতা হল শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে। প্রাইমার দুধে থাকা DHA উপাদান শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়। পরবর্তীতে শিশুর বুদ্ধিমত্তা প্রখর হয়।
হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করেঃ প্রাইমা দুধে থাকা উপাদান শিশুর শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে। পাশাপাশি ফস ফসফরাস সরবরাহ করে শিশুর দাঁতের গঠন ও ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করে ফলে শিশু সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ প্রাইমা দুধে থাকা উপাদান শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শিশুর শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর চাহিদা পূরণ করে শিশুর শরীরের ইমিউন সিস্টেম গুলোকে শক্তিশালী করে। ফলে শিশুর সহজেই অসুস্থ হয় না।
লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করেঃ প্রাইমা দুধে থাকা আয়রন ও ফলিক এসিড শিশুর শরীরে নতুন রক্ত কণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি রক্তে অক্সিজেন পরিবহন এবং রক্তস্বল্পতা দূর করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
ভিটামিন এ, সি, ডি সরবরাহ করেঃ প্রাইমা দুধে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ডি, যা এই ভিটামিন গুলোর চাহিদা পূরণ করতে সহায়ক। এ ভিটামিন গুলোর চাহিদা পূরণ করে শিশুর চোখের সমস্যা, হাড়ের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়কঃ প্রায়মা দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও পুষ্টি উপাদান যা শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে এবং উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
মাতৃদুগ্ধের চাহিদা পূরণ করেঃ প্রাইমা দুধ শিশুর মাতৃদুগ্ধের চাহিদা পূরণ করে। বিশেষ করে নবজাতক মাতৃদুগ্ধ না পেলে সহজে প্রাইমা দুধ খাইয়ে মাতৃদুগ্ধের চাহিদা পূরণ করা যায়।
প্রাইমা দুধের উপকারিতা গুনে শেষ করা যাবেনা। তবে উপরে দেওয়া এই উপকারিতা গুলো সবচেয়ে বেশি। প্রাইমা দুধ খেলে শিশুর শরীরে বাড়তি পুষ্টি যোগ হয় ফলে শিশু দ্রুত ওজন ও শারীরিক বৃদ্ধি হয়।
প্রাইমা ১ খাওয়ার বয়স
চিকিৎসকেরা শিশুর শারীরিক বয়স এর ওপর ভিত্তি করে প্রাইমা দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। শিশুর শারীরিক দিক থেকে দুর্বল হলে, মাতৃদুগ্ধ না পেলে, পুষ্টিহীনতায় ভুগলে চিকিৎসকেরা শিশুকে প্রাইমা দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। তবে শিশুর বয়স বেশি হলে চিকিৎসকেরা অন্য দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। প্রাইমা ১ খাওয়ানোর বয়স ৬ মাস পর্যন্ত। আপনার শিশুর বয়স ১-৬ এর মধ্যে হলে আপনি আপনার শিশুকে প্রাইমা ১ হতে পারেন।
প্রাইমা ১ বানানোর নিয়ম
অনেকে প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম ও প্রাইমা ১ বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান। প্রাইমা ১ একেবারে সহজ আপনি দুই মিনিটের মধ্যেই প্রাইমা ১ দুধ তৈরি করতে পারবেন। প্রাইমা ১ দুধ বানানোর জন্য প্রথমে আপনি আপনার হাত ও শিশুকে দুধ খাওয়ানোর ফিডার হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। উষ্ণ (কিন্তু ফুটন্ত নয়) এমন গরম পানি ফিডারে নিন।
প্রতি ৩০ মিলি পানিতে এক চামচ প্রাইমা পাউডার দিন। এরপর ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন। ফিডারের দুধ শিশুকে খাওয়ানোর জন্য প্রথমে আপনার হাতের তালুতে অথবা হাতের উপরের নরম তোকে দু-এক ফোঁটা দুধ নিন। এতে আপনি সহজে বুঝতে পারবেন দুধ কতটুকু গরম আছে। আপনি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারছেন তার চাইতে সামান্য পরিমাণ কম গরম থাকা অবস্থায় শিশুকে খাওয়ান। আশা করি প্রাইমা ১ বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম
অনেকে বাচ্চাকে প্রাইমা ১ দুধ খাওয়ান কিন্তু প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম জানেন না। বাচ্চাকে সঠিক নিয়মে প্রাইমা দুধ না খাওয়ালে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। কম পরিমাণে দুধ খাওয়ালে বাচ্চার সঠিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। অন্যদিকে অতিরিক্ত মাত্রায় দুধ খাওয়ালে বাচ্চার পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই নবজাতকের দিকে খেয়াল রেখে সঠিক মাত্রায় শিশুকে প্রাইমা দুধ খাওয়াতে হবে। প্রাইমার দুধ খাওয়ানোর সঠিক নিয়ম হল প্রতি ৩০ মিলি পানির জন্য এক চামচ দুধ মেশাতে হয়। মাস অনুযায়ী নিচে প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম দেওয়া হলঃ
- প্রথম মাসে ৯০ মিলি করে ২৪ ঘন্টায় ৬ বার
- দ্বিতীয় মাসে ১২০ মিলি করে ২৪ ঘন্টায় ৫ বার
- তৃতীয় মাসে ১৫০ মিলি করে ২৪ ঘন্টায় ৫ বার
- চতুর্থ মাসে ১৮০ মিলি করে ২৪ ঘন্টায় ৫ বার
- পঞ্চম ও ষষ্ঠ মাসে ২১০ মিলি করে ২৪ ঘন্টায় ৫ বার
প্রতি ৩০ মিলি পানিতে এক চামচ প্রাইমা দুধ মেশাবেন। পানির পরিমাণ যত বেশি হবে দুধের পরিমাণ তত বেশি মেশাবেন। যেমন ২১০ মিলি পানিতে ৭ চামচ প্রাইমা দুধ মেশাতে হবে। কখনোই শিশুকে অতিরিক্ত মাত্রায় দুধ খাওয়াবেন না। শিশু খেতে চাইলে খাওয়াবেন জোর করে কখনোই খাওয়াবেন না। এভাবে আপনি সঠিক নিয়মে আপনার শিশুকে প্রাইমা দুধ খাওয়াতে পারেন। আশা করি প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে যা জানতে পেরেছেন।
প্রাইমা দুধের দাম কত
শিশুর শারীরিক বিকাশের জন্য প্রাইমা দুধের উপকারিতা অনেক। প্রাইমা দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। প্রাইমা দুধ আমাদের বাংলাদেশী কোম্পানি হলেও এটি বাইরের দেশের পণ্য। তাই এর উৎপাদন খরচ ও বিভিন্ন শুল্ক এর উপর ভিত্তি করে এর দাম নির্ধারিত হয়েছে। প্রাইমা ১ ও ২ দাম প্রায় একই। ২০২৫ সালে প্রাইমা ১ ৪০০ গ্রাম জার ৭৮০ টাকা। প্রাইমা ২ ৪০০ গ্রাম জার ৮০০ টাকা। তবে সময় ও স্থানভেদে এই দাম কিছুটা কমবেশি হতে পারে।
প্রাইমা ২ খাওয়ার নিয়ম
চিকিৎসকেরা শিশুকে প্রাইমা ২ খাবার নির্দেশ দেন ৬ মাস বয়স অতিক্রম করলেই। এমন সময় শিশুর খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ছয় মাস বয়সের পরে শিশু চাহিদা অনুযায়ী প্রতি ২৪ ঘন্টায় শিশুকে ৫-৬ বার প্রাইমা ২ খাওয়াতে পারেন। প্রতি একবারের জন্য ২১০ মিলি পানিতে ৭ চামচ প্রাইমার দুধ মিশিয়ে মিক্স করে নিন। এরপর শিশুর চাহিদা অনুযায়ী শিশুকে খাওয়াতে পারেন।
প্রাইমা দুধ কোন দেশের কোম্পানি
অনেকেই নিয়মিত জিজ্ঞাসা করেন প্রাইমা দুধের উপকারিতা, প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম, প্রাইমা দুধ কোন দেশের কোম্পানি সে সম্পর্কে। প্রাইমা ব্র্যান্ড টি মূলত বাংলাদেশী তবে এটি ইউরো ফুড নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক। যা বাংলাদেশ স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউশন এর মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়। কোম্পানি উৎপাদন ও আমদানি করার পর আমদানিকৃত কোম্পানির নাম দ্রব্যে লিখে রাখে।
প্রাইমা ১ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
প্রাইমা ১ খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। প্রাইমা ১ শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য কেমন ক্ষতিকর নয়। এই দুধ সঠিক নিয়মে খাওয়ালে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবেন না। তবে মাত্রাতিরিক্ত খাওয়ালে শিশুর পেট ফাঁপা ও পেটে গ্যাস হতে পারে। শিশুর বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে। শিশুর শরীরে এলার্জি দেখা দিতে পারে। এছাড়া বদ হজমের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এরকম সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
লেখক এর মন্তব্য
প্রাইমা দুধ শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রাইমা দুধ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আপনার শিশুকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে চাইলে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে চাইলে প্রাইমা দুধ খাওয়াতে পারেন। আজকের আর্টিকেলটিতে প্রাইমা দুধের উপকারিতা, প্রাইমা ১ খাওয়ার নিয়ম, প্রাইমার দুধ সম্পর্কে প্রত্যেকটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছি।
প্রাইমা দুধ সম্পর্কে যদি আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থাকে সে ক্ষেত্রে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। নিয়মিত এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।