৫টি ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে, চিকিৎসা, প্রতিকার
কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে অনেকেই জানেন না। হাত পা জ্বালাপোড়া করলে দ্রুত কিছু উপায় অবলম্বন করে আপনি হাত পা জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হতে পারবেন। এছাড়া শরীর হাত পা জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে আজকের আর্টিকেলটিতে।
হাত পা জ্বালা পোড়ার কারণ একাধিক। বিভিন্ন কারণে হাত-পা জ্বালাপোড়া করে। অনেকেই হাত পা জ্বালাপোড়া করলে ঘরে বসে থাকেন। কিন্তু আপনি যদি নিজেই এ সমস্যার সমাধান করতে পারেন তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আজকের আর্টিকেলটিতে কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে সে সম্পর্কে পুরো বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
এছাড়া হাত পা জ্বালাপোড়ার ঘরোয়া চিকিৎসা, মুক্তির উপায়, ঔষধ, ও হাত-পা জ্বালাপোড়ার প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে এই আর্টিকেলটিতে। তাই হাত পা জ্বালাপোড়া সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।
পোস্ট সূচিপত্রঃ কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে - শরীর হাত পা জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার
.
হাত পা জ্বালাপোড়া করে কেন
হাত পা জ্বালাপোড়া করে কেন অনেকেই জানেন না। হাত পা জ্বালাপোড়া করার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে, শারীরিক কিছু রোগের জন্য, ক্যালসিয়ামের ঘাটতির জন্য, ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালাপোড়া করে। হাত পা জ্বালাপোড়া অস্বস্তিকর যন্ত্রণায়। যারা নিয়মিত এই সমস্যায় ভুগছেন তাদের জীবন হাত পা জ্বালাপোড়ার যন্ত্রণায় জর্জরিত।
সব সময় ভাবতে থাকেন কিভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই সমস্যায় প্রচুর সংখ্যক ব্যক্তি ভুগছেন। সঠিক জ্ঞানের অভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারছেন না। হাত পা জ্বালাপোড়া করলে তৃপ্তি মতো ঘুম আসেনা, কোন কাজে মন বসে না। কোন জায়গায় বসে দাঁড়িয়ে শান্তি পাওয়া যায় না। তাই আপনিও যদি এই রোগের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য রয়েছে কিছু সঠিক পরামর্শ। যে পরামর্শ গুলো মেনে চললে খুব দ্রুত হাত-পা জ্বালাপোড়া সমস্যা থেকে সুস্থ হতে পারবেন।
কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে
হাত পা জ্বালাপোড়া অসহ্যকর একটি পরিস্থিতি। এ সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের দিনের অধিকাংশ সময় হাত পা জ্বালাপোড়া করে। জ্বালাপোড়া করার স্থান গরম হয়ে থাকে। চিকিৎসকদের মতে শরীরে কিছু রোগ ও ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালাপোড়া করে। কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে নিম্নে সে বিষয়ে দেওয়া হলোঃ
- ভিটামিন ডি
- ভিটামিন বি১
- ভিটামিন বি৬
- ভিটামিন বি১২
- ভিটামিন ই
ভিটামিন ডিঃ শরীরের ক্যালসিয়ামের সাথে ভিটামিন ডি এর সম্পর্ক রয়েছে। শরীরে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ সঠিক থাকলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয় না। যদি শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হয় তাহলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলেই হাত পা জ্বালাপোড়া করে। এছাড়া শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে অস্টিওম্যালাসিয়া রোগ হয়।
শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব হলে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফেট, যা শরীর থেকে শোষণ করতে পারে না। অন্যদিকে অস্টিওম্যালাসিয়া রোগ হলে হাড়ের ফসফেট, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, এর অভাব দেখা দেয়। হলে হাড়ের গঠন দুর্বল হয়ে যায় হাড় নরম হয়ে যায় সহজে হাড়ের ক্ষয়, ব্যথা, সৃষ্টি হয়।
ভিটামিন বি১ঃ শরীরে ভিটামিন বি১ এর ঘাটতি হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন বি১ এর ঘাটতি হলে শরীরে নার্ভের কার্যকারিতা কমে যায়। নার্ভের কার্যকারিতা কমে গেলে হাত পায়ে ঝিনঝিন, হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া, হাত পায়ে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করবেন।
ভিটামিন বি৬ঃ শরীরে ভিটামিন বি৬ এর অভাব হলে শরীরের মাংস বেশি ও হাত পা জ্বালা পোড়া করে। কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে এরমধ্যে ভিটামিন বি৬ একটি। শরীরে ভিটামিন বি৬ এর অভাব হলে শরীরে পেলেগ্রা রোগ হয়। ভিটামিন বি৬ শরীরের অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান শরীরকে সুস্থ রাখতে ও শরীরের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করতে ভিটামিন বি৬ এর অবদান অনেক।
ভিটামিন বি৬ কারণে যখন পেলেগ্রা রোগ হয় তখন রোগীর হাত পা জ্বালাপোড়া করে। এছাড়া পেলেগ্রা রোগ হলে হাত পা জ্বালাপোড়ার পাশাপাশি রোগীর স্মৃতিভ্রংশ, উদারাময়, চর্মরোগ, ডার্মাটাইটিস, শরীরে হাড়ের ফ্র্যাকচার, দেখা দেয়। তাই শরীরে এরকম সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ভিটামিন বি৬ সেবন করুন।
ভিটামিন বি১২ঃ শরীরে ভিটামিন বি১২ এর অভাব হলে হাত পা জ্বালা পোড়া করে। ভিটামিন বি১২ শরীর হাত পা জ্বালা পোড়ার কারণ ও প্রতিকার এর একটি। শরীরে ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি হলে শরীরের পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথিক অবস্থা দেখা দেয় এমন সময় হাত পা জ্বালা পোড়া বৃদ্ধি পায়। নিউরোপ্যাথিক হলে স্নায়ুর সমস্যা হয়।
শারীরিক দুর্বলতা, সাধারণ দুর্বলতা, হাঁটাচলা করতে অসুবিধা, ও হাত পা জ্বালা পোড়া করে। এছাড়া পেরি ফেরাল নিউরোপ্যাথি হলে এই দুর্বলতা সহ শারীরিক দুর্বলতা সাথে মস্তিষ্ক মেরুদন্ডের ও হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ফলে হাড়ের জ্বালা পোড়া বৃদ্ধি পায়।
তাই হাত পা জ্বালা পোড়া করলে ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২ এই তিনটি ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে। প্রিয় পাঠক আশা করি কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন।
ভিটামিন ইঃ শরীরে ভিটামিন ই এর ঘাটতি হলে নিউরোপ্যাথি জনিত সমস্যা হয়। নিউরোপ্যাথি হলে হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া, ঝিনঝিন করা, হাত পায়ে টান ধরা, ও ব্যথা অনুভব করবেন।
শরীর হাত পা জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার
শরীরের হাত পা জ্বালা পোড়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। শরীর হাত পা জ্বালা পোড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। শরীরের বিভিন্ন সমস্যার কারণে শরীর হাত পা জ্বালা পোড়া করে। শরীর হাত পা জ্বালাপোড়া করা অসহ্য নিও একটি সমস্যা। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য অবশ্যই এর প্রতিকার সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। শরীর হাত পা জ্বালা পোড়ার কারণ নিচে দেওয়া হলঃ
- ভিটামিন ডি এর অভাব
- ভিটামিন বি৬ এর অভাব
- ভিটামিন বি১২ এর অভাব
- শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি
- অস্টিওম্যালাসিয়া রোগ হলে
- ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতি হলে
- ফসফেট এর ঘাটতি হলে
- পেলেগ্রা রোগ হলে
- পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথিক জনিত সমস্যা হলে
- শরীরের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা কমে গেলে
উল্লেখিত কারণে শরীর হাত পা জ্বালা পোড়া করে। হাত পা জ্বালাপোড়া করলে উল্লেখিত সমস্যাগুলোর ঔষধ সেবন করলে হাত-পা জ্বালাপোড়া থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। হাত পা জ্বালা পোড়ার প্রতিকার সম্পর্কে নিচে দেওয়া হলঃ
- নিয়মিত ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন
- ভিটামিন বি৬ যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন এছাড়া ঔষধ সেবন করুন।
- ভিটামিন বি১২ ট্যাবলেট সেবন করুন
- বেশি বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খান
- ম্যাগনেসিয়াম, ফসফেট যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন এতে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে
আশা করি উপরোক্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রতিকার করার জন্য নিম্নের বিষয় গুলো মেনে চলুন। ও এই উপায় গুলো অবলম্বন করুন তাহলে দ্রুত শরীর হাত পা জ্বালা পোড়া প্রতিকার করতে পারবেন। প্রিয় পাঠক নিশ্চয় আপনি শরীর হাত পা জ্বালা পোড়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
হাত পা জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তির উপায়
হাত পা জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তির জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন। আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত বেশি বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। আপনি যদি অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন সে ক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমান। হাত পা জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান।
এছাড়া ভিটামিন বি ১, ৬, ১২ ভিটামিন ই যুক্ত খাবার বেশি বেশি খান। আপনি যদি ধূমপাই হন সেক্ষেত্রে ধূমপান পরিহার করুন। অ্যালকোহল জাতীয় খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। হাত পা জ্বালা পোড়া হলে নিয়মিত হাত পা ম্যাসাজ করুন এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে।
হাত পায়ের ব্যথা, জ্বালাপোড়া করলে আপনি নিউরোপ্যাথি জনিত সমস্যায় ভুগছেন। তাই আপনাকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। এরমধ্যে মাছ-মাংস, ডিম, দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, বাদাম এবং ছোলা জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।
হাত পা জ্বালা পোড়ার ঘরোয়া চিকিৎসা
হাত পা জ্বালা পোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে প্রথমেই আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে রাখুন। নিয়মিত পা মেসেজ করুন, যে স্থানে ব্যথা ও জ্বালা পোড়া হচ্ছে ওই স্থান বেশি বেশি মাসাজ করুন। নিয়মিত জগিং করুন। বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। আপনার যদি পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি থাকে সেক্ষেত্রে এই সমস্যার চিকিৎসা করুন।
নিয়মিত গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখুন। দ্রুত রাত হলেই ঘুমিয়ে পড়ুন রাত জাগা পরিহার করুন। যখন পা জ্বালাপোড়া করবে তখন উষ্ণ হালকা গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখুন। এছাড়া নিয়মিত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি যুক্ত খাবার বেশি বেশি গ্রহণ করুন।
হাত পা জ্বালাপোড়া ঔষধ
পা জ্বালাপোড়ার ঔষধ সম্পর্কে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন। তবে পা জ্বালাপোড়া করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের সাথে পরামর্শের পূর্বে আপনি ব্যথার ওষুধ সেবন করতে পারেন। কেননা হাত পা জ্বালা পোড়া বিভিন্ন সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। তাই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ ছাড়া কখনোই একাকী ঔষধ সেবন করবেন না।
লেখকের মন্তব্য
কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে ও শরীর হাত পা জ্বালা পোড়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটিতে সঠিক তথ্য তুলে ধরেছি। আশা করি বিষয়গুলো জেনে উপকৃত হবেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। নিয়মিত এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। এই সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের চিকিৎসা সম্পর্কিত ক্যাটাগরি ঘুরে আসুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।