নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয়, চিকিৎসা, লক্ষণ, প্রকার, কেন হয়

নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় হল কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবলম্বন করা। যাতে দ্রুত নবজাতকের জন্ডিস সারানো যায়। এমন সময় শিশুর প্রতি অযত্নবান হলে শিশু বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। নবজাতকের জন্ডিসের হোমিও চিকিৎসা ও নবজাতকের জন্ডিস সম্পর্কে প্রত্যেকটি বিষয় থাকছে আজকের আর্টিকেলটিতে।
নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় - নবজাতকের জন্ডিসের হোমিও চিকিৎসা
প্রত্যেকটি নবজাতকের কমন একটি সমস্যা জন্ডিস। কমবেশি প্রত্যেকটি শিশুরই জন্মের ২দিনের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দেয়। নবজাতকের জন্ডিস কেন হয়, কিভাবে ভালো করবেন, লক্ষণ, মাত্রা, ঔষধ, টিকা, ও নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় - নবজাতকের জন্ডিসের হোমিও চিকিৎসা

.

নবজাতকের জন্ডিস

নবজাতকের জন্ডিস হয় উচ্চ বিলিরুবিনের মাত্রার কারণে। নবজাতকের জন্ডিস হলে পুরো শরীর হালকা অথবা গাড় হলুদ বর্ণ ধারণ করে। হাত পা মুখমণ্ডল, ও চোখের সাদা অংশ গুলোতে হলুদ বর্ণ দেখা যায়। সাধারণত শিশুদের জন্ডিসের কয়েকটি ধরন রয়েছে। এ ধরন গুলোর মধ্যে বিলিরুবিনের মাত্রা কম বেশি হয়। 

রক্তের বিলিরুবিনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেলে জন্ডিস দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়। সাধারণত শিশুদের মায়ের কিছু করণীয় মেনে চললে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই জন্ডিস সেরে যায়। কিন্তু বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে জন্ডিস ভালো হতে সময় নেয়।

নবজাতকের জন্ডিস কতদিন থাকতে পারে

সাধারণত নবজাতকের জন্ডিস ১-৭দিন স্থায়ী হয়। তবে লক্ষণ দেখা মাত্র চিকিৎসা না করলে অথবা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে জন্ডিস ভালো হতে এর চাইতে বেশি সময়ও লাগতে পারে। সঠিক মেয়াদের কম সময়ে জন্ম নেওয়া শিশুরা সবচাইতে বেশি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়।

নবজাতকের জন্ডিসের স্বাভাবিক মাত্রা কত

সাধারণত নবজাতকের ক্ষেত্রে কয়েকটি পর্যায়ের জন্ডিস লক্ষ্য করা যায়। জন্ডিস প্রত্যেকটি শিশুর জন্মের পরপরই একটি কমন সমস্যা। বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি হলে জন্ডিস ভালো হতে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ সময় নেয়। তবে জন্ডিসের স্বাভাবিক মাত্রা কম থাকলে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহর মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। নবজাতকের জন্ডিসের স্বাভাবিক মাত্রা 1.0 mg/dl (17μmol/L এর নিচে।

নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয়

নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় হলো শিশুর প্রতি সবচাইতে বেশি যত্নবান হওয়া। শিশুর সবচাইতে আপনজন তার মা তিনি সবসময় তার কাছাকাছি থাকেন। শিশুর জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্র নির্দিষ্ট কিছু উপায় অবলম্বন করা উচিত৷ শিশুর জন্ডিস হলে ১-১৪ দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে যদি এর মাত্রা বাড়তে থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 
নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় - নবজাতকের জন্ডিসের হোমিও চিকিৎসা
শিশুর জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে মায়ের করনীয় হল শিশুকে তার চাহিদা অনুযায়ী দুগ্ধ পান করানো। যত বেশি সম্ভব শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিসের মূল চিকিৎসাই হল শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো। সম্ভব হলে প্রতি ঘন্টায় শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান। যদি শিশুর বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে ফটো থেরাপি দিতে হবে। যদি অল্পমাত্রায় জন্ডিস দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে নিয়মিত সকালবেলার হালকা রোদে ২০মিনিট শিশুকে রাখুন। 

সকাল বেলার হালকা রোদে রয়েছে ভিটামিন ডি যা শিশুর জন্ডিসের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে রক্তে যদি বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রিয় পাঠক আশা করি নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় কি সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন।

নবজাতকের জন্ডিসের হোমিও চিকিৎসা

নবজাতকের জন্ডিসের চিকিৎসায় হোমিও ঔষধ বিশেষ ভূমিকা রাখে। অনেক শিশুর জন্ডিসের চিকিৎসায় হোমিও ঔষধ সেবন করানো হয়। হোমিও চিকিৎসায় শিশুর জন্ডিসের লক্ষণ, স্বাস্থ্য, উপসর্গ, ত্বকের ধরন, শিশুর শারীরিক বিষয়গুলো দেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে সব হোমিও চিকিৎসক জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য সঠিক ভূমিকা রাখে না। 

নবজাতকের জন্ডিসের চিকিৎসায় হোমিও ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন ভাল যোগ্যতা সম্পন্ন হোমিও চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। জন্ডিসের এক এক ধরনের চিকিৎসায় এক এক রকমের হোমিও ঔষধ ব্যবহার করা হয়। নবজাতকের জন্ডিসের মাত্রা কমাতে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কমাতে Lupulus 20। 
শিশুর মলের রং স্বাভাবিক এর চাইতে পরিবর্তন হলে চেলেডোনিয়াম মেজ ৩০ সেবন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া নবজাতকের জন্ডিসের হোমিও চিকিৎসা হিসেবে নাক্সভামিকা, ফসফরাস, মারকিউরাস, পোডোপাইলাম, সেপিয়া, সালফার, chin a30, marc sol 30, Arnica Montana 30, Lycopodium clav 30, ক্যামোমিলা, ব্রায়োনিয়া, সেপিয়া, সালফার, লক্ষণ অনুযায়ী এই হোমিও ঔষধ গুলো শিশুদের জন্ডিসের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

নবজাতকের জন্ডিস হলে কি করব

নবজাতকের জন্ডিস হলে অবশ্যই দ্রুত শিশুর প্রতি যত্নবান হন। নবজাতকের জন্ডিস হলে ঘনঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রতি ঘন্টায় শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান। জন্ডিসের মাত্রা কম হলে তেমন কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই এক থেকে সাত দিনের মধ্যেই জন্ডিস সেরে যায়। তবে বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি হলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে দ্রুত পরামর্শ করুন।

নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ

নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় শিশুকে ঘনঘন বুকের দুধ খাওয়ানো। নবজাতকের শারীরিক কিছু লক্ষণ দেখা দিলেই খুব সহজে বুঝতে পারবেন নবজাতকের জন্ডিস হয়েছে। স্বাভাবিকের চাইতে নবজাতকের শারীরিক কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। নবজাতকের জন্ডিস হলে নবজাতকের পুরো শরীর হলুদা ভাব ধারণ করবে, হাতের তালু, পায়ের তালুর রং হলুদ আকার ধারণ করবে। চোখের সাদা অংশ ও মুখমণ্ডল হলুদ রং ধারণ করবে। 

বাচ্চার পেটের রং হলুদ দেখাবে। বাচ্চার পায়খানার রং ফ্যাকাসে বা আলাদা রং ধারণ করবে। শিশু বুকের দুধ খাওয়ার অনীহা থেকে শুরু করে খিচুনির মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। শিশুর বুকের অংশ থেকে উরু পর্যন্ত হালকা হলুদা ভাব ধারণ করবে। শিশুর জিহ্বা সহ শরীরের প্রত্যেকটি অংশ হালকা হলুদ রং ধারণ করবে। শিশুর পেশাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া বমি ও ক্লান্তি ভাব দেখা দেবে। উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখলে খুব সহজে বুঝবেন যে নবজাতক শিশুর জন্ডিস হয়েছে।

নবজাতকের জন্ডিস কত প্রকার

সাধারণত নবজাতকের ক্ষেত্রে জন্ডিস দুই প্রকারের হয়। ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস, ও প্যাথলজিক্যাল জন্ডিস। নবজাতকের ক্ষেত্রে এ দুই প্রকার জন্ডিস সবচাইতে বেশি লক্ষ্য করা যায়।
ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিসঃ ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস শিশুদের জন্মের দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই লক্ষণ প্রকাশ পায়। সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহের মধ্যেই এই জন্ডিস ভালো হয়ে যায়। এটি সাধারণ জন্ডিস হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। কেননা নবজাতকের যকৃত পুরোপুরি কার্যকরী না হওয়ার ফলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। 

শিশুর চোখের সাদা অংশ হলুদা ভাব ধারণ করে। মলের রং ফ্যাকাসে অথবা সাদাটে হয়ে যায়। শিশুর প্রসাবের রং গাঢ় হলুদ বর্ণ ধারণ করে। ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিসের সাধারণত চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘনঘন বুকের দুধ খাওয়ালে এমনিতেই সেরে যায়। তবে সমস্যা বৃদ্ধি পেলে ফটোথেরাপি দিতে হয়।
প্যাথলজিক্যাল জন্ডিসঃ শিশুর ক্ষেত্রে এ জন্ডিস মারাত্মক আকার ধারণ করে। শিশুর যকৃতের সমস্যা, বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ, পিতা মাতার রক্তের গ্রুপের সমস্যার কারণে শিশুর প্যাথলজিক্যাল জন্ডিস হয়। আক্রান্ত হলে দ্রুত জন্ডিসের প্রকোপ ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিসের চাইতে বৃদ্ধি পায়। শিশুর প্যাথলজিক্যাল জন্ডিস এর লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

নবজাতকের জন্ডিস কেন হয়

নবজাতকের জন্ডিস বিভিন্ন কারণে হয়। এর মধ্যে প্রধান কারণ নবজাতকের যকৃত পুরোপুরি কার্যকরী না হওয়া। এমন সময় রক্তকণিকা ভেঙে বিলিরুবিনের মাত্রাবৃদ্ধি পাওয়া। এছাড়া বাবা মার রক্তের গ্রুপের কারণে ও হিমোলাইটিক রোগ হলে শিশুরা জন্ডিস হয়। যকৃতের সমস্যা থাকলে নবজাতকের জন্ডিস হয়। এছাড়া জন্মগত শিশুর বিভিন্ন সমস্যা ও সংক্রমিত হলে জন্ডিস হয়।

নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয়

নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় হল ঘন ঘন শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো। যদি পারেন প্রতি ঘন্টায় শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান। শিশুর অল্পমাত্রা জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে চিন্তার তেমন কোন কারণ নেই। এটি এক সপ্তাহর মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে প্যাথলজিক্যাল জন্ডিসে শিশু আক্রান্ত হলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

নবজাতকের জন্ডিসের চিকিৎসা

নবজাতকের জন্ডিসের চিকিৎসা হলো নবজাতকের প্রতি যত্নবান হওয়া। এমন সময় শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ানো। ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস হলে শিশুকে কয়েকদিন সকালে অল্প তাপমাত্রা রোদে রাখা। রোদে থাকা ভিটামিন ডি শিশুর এই জন্ডিস সারতে সাহায্য করবে। এছাড়া প্যাথলজিক্যাল জন্ডিসে শিশু আক্রান্ত হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

নবজাতকের জন্ডিসের মাত্রা

নবজাতকের জন্ডিসের মাত্রা এক এক সময় এক এক রকম দেখা যায় তবে নবজাতক জন্ডিসের আক্রান্ত হলে বিলিরুবিনের মাত্রা 34 μmol/L (2 mg/dL) এর বেশি দেখা যায়।

লেখক এর মন্তব্য

নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় ও নবজাতকের জন্ডিসের হোমিও চিকিৎসা সম্পর্কে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন। আজকের আর্টিকেলটিতে নবজাতকের জন্ডিস সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছি। আশা করি বিষয়গুলো পড়ে উপকৃত হবেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। 

নিয়মিত এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েব সাইটে ভিজিট করুন। শিশু সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের শিশু সম্পর্কিত ক্যাটাগরি ঘুরে আসুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন