ক্যালাজিয়ন কেন হয়, চিকিৎসা, ঔষধ, পূর্ব প্রস্তুতি, করণীয়
ক্যালাজিয়ন কেন হয় ক্যালাজিয়ন হলে এর চিকিৎসা কিভাবে নেওয়া উচিত আপনি কি জানেন? আপনার যদি ক্যালাজিয়ন হয় সেক্ষেত্রে ক্যালাজিয়ন এর ঔষধ সেবন করা উচিত কিনা সে সম্পর্কে পুরো আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে।
ক্যালসিয়াম চোখের একটি সমস্যা যা চোখের মারাত্মক আকার ধারণ করে। চোখে এই সমস্যা হলে ভালো হতে দীর্ঘ সময় নিতে পারে। অতিরিক্ত ব্যথা ও ফোলার মাধ্যমে এ রোগের প্রকাশ পায়।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ক্যালাজিয়ন কেন হয় - ক্যালাজিয়ন এর ঔষধ
.
ভূমিকাঃ
ক্যালাজিয়ন এটি একটি চোখের স্বাভাবিক সমস্যা। কমবেশি প্রত্যেকের চোখে এই সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে চোখ অপরিষ্কার থাকলে ধুলোবালি, ময়লা, এবং রোগ জীবাণু দ্বারা মুখমণ্ডল আক্রান্ত হলে সেক্ষেত্রে ক্যালাজিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ক্যালাজিয়ন হলে চিন্তার তেমন কোন কারণ নেই।
ক্যালাজিয়নের মধ্যে কিছু ভাগ রয়েছে যা সহজে ভালো হয়ে যায়। আবার কোন গুলো ভালো হতে দীর্ঘ সময় নেই। তবে ক্যালাজিয়ন চোখের সাধারণ সমস্যা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এটি চোখের কোন ক্ষতি করে না বা দৃষ্টিশক্তির কোন বিঘ্ন ঘটায় না। তবে এই সমস্যা হলে চোখে প্রচন্ডভাবে ব্যথা হয়।
যে কয়দিন চোখে এ সমস্যা স্থায়ী হয় সে কয়দিন চলাফেরা, ঘুম, খাদ্যাভাস, সবগুলো রই বিঘ্ন ঘটাতে পারে। ক্যালাজিয়ন কেন হয়, ক্যালাজিয়ন এর ঔষধ এবং ক্যালাজিয়ন বিষয়ে সকল প্রশ্নের উত্তর জানতে আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
ক্যালাজিয়ন কি
ক্যালাজিয়ন হলো চোখের একটি রোগের নাম। ক্যালাজিয়ন চোখের পাপড়িতে গুটি আকারে ফুলে যায়। এ রোগ কে টারসাল সিস্ট ও বলা হয়। বাংলায় একে ক্যালাজিয়ন বা অঞ্জনী বলা হয়। এটি একটি চোখের সমস্যা ও রোগ। এ রোগে চোখের পাপড়িতে অথবা পাপড়ি থেকে কিছু অংশ দূরে ক্যালাজিয়ন দেখা দেয়। এটা দেখতে ছোট আকৃতির ফোঁড়ার মতো, অথবা গুটি আকৃতির সৃষ্টি হয়।
সাধারণত এটি চোখের পাপড়িতে বেশি পরিমাণ হয়। ক্যালাজিয়ন চোখের পাপড়িতে একাধিক এর বেশিও হতে পারে। ক্যালাজিয়ন আলাদা আলাদা ব্যক্তির ক্ষেত্রে, ভিন্ন ভিন্ন আকারে প্রকাশ পায়। তবে সাধারণত এটি তেমন কোন চিন্তার বিষয় নয়। তবে যদি একাধিক বার বা এক জায়গায় বারবার হয় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
ক্যালাজিয়ন এর চিকিৎসা
অনেকে ক্যালাজিয়ন কেন হয় এ বিষয়ে জানেন না। চোখে ক্যালাজিয়ন হলে ভয়ে ভেঙে পড়েন এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। আসলে ক্যালাজিয়ন এর চিকিৎসা ছাড়াই ক্যালাজিয়ন ভালো হয়। তবে ক্যালাজিয়ন স্থায়িত্ব অনুযায়ী এর চিকিৎসা করা প্রয়োজন। প্রথমত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালাজিয়ন হলে ঘরোয়াভাবে যত্ন নেওয়া।
ক্যালাজিয়ন হলে এর প্রকার অনুযায়ী ১-৩০ দিন পর্যন্ত ভালো হতে সময় নেয়। আপনার চোখে প্রথম অবস্থায় ক্যালাজিয়ন দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পূর্বে আপনি এর যত্ন নিন। দিনে ৫-৬ বার হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখমণ্ডল ধৌত করুন। এক টুকরো পরিস্কার সুতির কাপড় দিয়ে হালকা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে ক্যালাজিয়ন বা অঞ্জনি হওয়ার স্থানে শেক দিন।
দিনে ৫ থেকে ৬ বার এভাবে শেক দিলে খুব দ্রুত ক্যালাজিয়ন মুখ খসে ভালো হয়ে যাবে। তবে এর স্থায়িত্ব যদি দীর্ঘদিন হয় সেক্ষেত্রে চিকিৎসা নিতে পারেন। ক্যালাজিয়নের তেমন কোন ক্ষতিকর দিক নেই। এর চিকিৎসায় শুধুমাত্র চোখের ড্রপ দেওয়া হয়। ক্যালাজিয়ন যদি অধিক চুলকায় বা রক্ত বের হয় বা আঙ্গুল দিয়ে ঘষার কারণে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে পারেন। এটি গুরুতর আকার ধারণা করলে ঔষধ সেবন করার প্রয়োজন নেই।
ক্যালাজিয়ন কেন হয়
এ প্রসঙ্গে বলা যায় ক্যালাজিয়ন চোখের একটি স্বাভাবিক সমস্যা। কমবেশি প্রত্যেকটি বয়সে লোকের ক্ষেত্রেই এ সমস্যা দেখা দেয়। ক্যালাজিয়ন চোখের পাপড়িতে গুটি আকার ধারণ করে। ক্যালাজিয়নকে হাতের আঙ্গুল দিয়ে অতিরিক্ত না আঘাত প্রাপ্ত করলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে না। ক্যালাজিয়ন কেন হয় তাহলো প্রত্যেকের চোখের পাতার মধ্যে অয়েল গ্ল্যান্ড থাকে।
অয়েল গ্ল্যান্ডের মুখ যদি কোন কারণে বন্ধ হয় সেক্ষেত্রে ক্যালাজিয়ন হয়। চোখে ক্যালাজিয়ন হলে অনেকটা জায়গা লাল হয়ে যায় এবং ফুলে যায়। আমরা যদি এটাকে আঙ্গুল দিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করি তাহলে মনে হয় সেখানে গোটা অঞ্জনি বা ফোড়ার মত হয়ে আছে। চোখ ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে ক্যালাজিয়ন হয়। সারাদিনের ধুলোবালি ময়লা চোখে লেগে থাকলে ক্যালাজিয়ন হয়। তাই ক্যালাজিয়ন থেকে দূরে থাকতে অবশ্যই চোখ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
ক্যালাজিয়ন এর ঔষধ
ক্যালাজিয়ন এর চিকিৎসায় তেমন কোন ঔষধ গ্রহণ করতে হয় না। সাধারণত চোখে কুসুম গরম পানির সেক দেওয়ার মাধ্যমে ক্যালাজিয়ন সেরে যায়। ক্যালাজিয়ন যদি ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে সে ক্ষেত্রে ওষুধ সেবন করার প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত ব্যথা হলে ব্যথার ওষুধ সেবনের পরিবর্তে নাপা অথবা নাপা এক্সট্রা সেবন করুন। চোখ লাল হলে চোখের ড্রপ ব্যবহার করুন। ক্যালাজিয়ন যদি মারাত্মক আকার ধারণ করে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চোখের ক্যালাজিয়ন
চোখের ক্যালাজিয়ন চোখের একটি রোগের নাম। এ রোগটি মেইবোমিয়ান সিস্ট নামেও পরিচিত। চোখের পাপড়ির অয়েল গ্ল্যান্ডের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে ক্যালাজিয়ন হয়। ক্যালাজিয়ন হলে অধিক ব্যথার সম্মুখীন হতে হয়। ক্যালাজিয়ন বেশ কিছুদিন স্থায়ি হতে পারে। ক্যালাজিয়ন সহজে ভালো হয়ে যাওয়া ও দীর্ঘ সময় নেয়া দুটোই বাস্তব প্রমাণ রয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রেই এ রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে না। এ রোগ সহজে ভালো হয়, কিন্তু হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অতিরিক্ত ব্যথার সম্মুখীন হতে হয়। ক্যালাজিয়ন হলে চোখের তেমন ক্ষতি করে না।
ক্যালাজিয়ন অপারেশন খরচ
ক্যালাজিয়ন হলে অপারেশন করতে হয় না কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত যদি এটি স্থায়ী হয় সেক্ষেত্রে অপারেশন করা প্রয়োজন। বা ক্যালাজিয়ন দীর্ঘদিন স্থায়ী থাকার পরেও ওষুধ সেবন করেও ভালো হচ্ছে না এমন সময় অপারেশন করা যায়। বিভিন্ন চোখের ডাক্তাররা ক্যালাজিয়নের অপারেশন করে থাকেন। ক্যালাজিয়ন অপারেশন খরচ ভিন্ন ভিন্ন ডাক্তারের কাছে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকার মধ্যে এর চিকিৎসা ও অপারেশন করাতে পারবেন।
ক্যালাজিয়ন না হওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি
ক্যালাজিয়ন যাতে না হয় সেজন্য আপনি পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারেন তা হলঃ আপনি আপনার মুখমন্ডল নিয়মিত ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখের পাপড়ি সহ মুখমন্ডল ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। নোংরা ধুলাবালি চোখে ও মুখে লাগলে সাথে সাথে ধুয়ে ফেলুন। যদি পারেন নিয়মিত দিনে ১-২ বার হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ-মুখ পরিষ্কার করুন।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ক্যালাজিয়ন হলে করণীয়
বয়স্কদের পাশাপাশি বাচ্চাদেরও ক্যালাজিয়ন হয়। প্রত্যেকটি বয়সের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই ক্যালাজিয়ন লক্ষ্য করা যায়। উল্লেখিত যে নিয়ম গুলো বলা হয়েছে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একই নিয়ম কার্যকরী। তবে অতিরিক্ত ব্যথার জন্য বাচ্চাকে নাপা সিরাপ খাওয়াতে পারেন। এক সপ্তাহের মধ্যে যদি ভালো না হয় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে দ্রুত শিশু সুস্থ হবে।
লেখকের মন্তব্য
ক্যালাজিয়ন কেন হয় ক্যালাজিয়ন এর ঔষধ সম্পর্কে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের উদ্দেশ্যে লিখা। চোখের ক্যালাজিয়ন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি। যদি এ সম্পর্কে আপনার আরো জানার প্রশ্ন থাকে সে সম্পর্কে কমেন্টে জানাতে পারেন।
এ রকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে নিয়মিত আমাদের সাইটটি ভিজিট করুন। আপনার যদি বিভিন্ন বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকে সে ক্ষেত্রে আমাদের ক্যাটাগরি গুলো ঘুরে আসুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।