জিংক সিরাপ এর কার্যকারিতা, উপকারিতা, অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, দাম
শিশুদের জন্য জিংক সিরাপ এর কার্যকারিতা প্রচুর। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজের মিশ্রণে জিংক সিরাপ প্রস্তুতকৃত। জিংক সিরাপ সেবনে ফলে শিশুর শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শিশুকে সুস্থ এবং সবল রাখে। জিংক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম, এর দাম, উপকারিতা ও অপকারিতা, সম্পর্কে থাকছে বিস্তারিত৷
বিভিন্ন ভিটামিন গুলোর মধ্যে জিংক সিরাপ অত্যন্ত কার্যকরী। শিশুদের বিভিন্ন সমস্যায় জিংক সিরাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ জিংক সিরাপ এর কার্যকারিতা - জিংক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম
.
ভূমিকাঃ
জিংক সিরাপ শিশুদের বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি শরীরের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। শরীরে অতিরিক্ত রোগ বালাই ক্ষুধামন্দা অরুচি ভাব, বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি, শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য জিংক সিরাপ সেবন করা প্রয়োজন৷ জিংকে রয়েছে সালফেট ও মনো হাইড্রেট যা খনিজ প্রক্রিয়াজাত একটি দ্রবণীয়৷ জিংক শিশুদের জন্য অত্যন্ত উপকারী শিশুদের জিংক সিরাপের উপকারিতা, জিংক সিরাপ এর কার্যকারিতা এবং জিংক সিরাপ সম্পর্কে যাবতীয় বিস্তারিত জানতে হলে আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।
জিংক সিরাপ কি কাজ করে
জিংক সিরাপ শিশুদের শরীরের বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে। শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য জিংক সিরাপ অত্যন্ত উপকারী। চিকিৎসকদের মতে শিশুকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতি দুই মাস পর পর একটি করে জিংক সিরাপ খাওয়ানো প্রয়োজন। শরীরের প্রত্যেকটি ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের জন্য জিংক সিরাপ বিশেষভাবে কাজ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।
জিংক সিরাপ এর কার্যকারিতা
শিশুদের জন্য জিংক সিরাপ অত্যন্ত উপকারী। স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য শিশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। সঠিকভাবে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ না করলে শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। শরীরে বাসা বাঁধে বিভিন্ন রোগ-বালাই। শরীরে জিংকের অভাব দেখা দিলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে জিংকের অভাবে যে সমস্যাগুলো দেখা দেয় তা পয়েন্ট আকারে দেওয়া হলঃ
- অরুচি ভাব
- ত্বকের সমস্যা
- হাড় ও দাঁতের গঠন ব্যাহত হওয়া
- শারীরিক দুর্বলতা বৃদ্ধি পাওয়া
- হজম শক্তি কমে যাওয়া
- রাতকানা রোগ দেখা দেওয়া
- মানসিক ডিপ্রেশন বৃদ্ধি পাওয়া
- এলার্জিজনিত সমস্যা
- ত্বকের চুলকানি বৃদ্ধি পাওয়া
- শরীর উসকো খুসকো হওয়া
- মাথার চুল উঠে যাওয়া
- ত্বক ফ্যাকাসে হওয়া
- ডায়রিয়ার সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার
- প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়া
- স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা কমে যাওয়া
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
- ক্ষত বা ঘা সারতে দেরি হওয়া
- মহিলাদের ক্ষেত্রে এবরশন এর ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া
- গর্ভধারণ এ ব্যর্থ হওয়া
- শারীরিক অক্ষমতা দেখা দেওয়া
জিংক ভিটামিনের অভাবে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে একই সমস্যা পর্যবেক্ষণ করা যায়। তবে বয়সের পার্থক্যের জন্য কিছু কিছু সমস্যার পার্থক্য হতে পারে। শরীরের উল্লেখিত সমস্যাগুলো দেখা দিলে জিংক ভিটামিন সেবনের মাধ্যমে সমস্যা গুলো দূর করা যায়। জিংক সিরাপ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। শিশুদের ক্ষেত্রে জিংক সিরাপ শরীরের ভিটামিনের চাহিদা গুলো পূরণ করে। জিংক সিরাপ এর কার্যকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
- অরুচি ভাব
- ত্বকের সমস্যা
- ত্বকের খসখসে ভাব
- ডায়রিয়ার সমস্যা
- হজম শক্তি কমে যায়
- শারীরিক দুর্বলতা
- চুল উঠে যাওয়া
- স্বাদ গ্রহণে অনীহা
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
অরুচি ভাবঃ নিয়মিত শিশুদের ক্ষেত্রে অরুচি ভাব, খাবার না খাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়। কোন খাবার ঠিকভাবে খেতে চায় না। এমন সময় শিশুকে একটা জিংক সিরাপ সেবন করালে শিশুর খাবারের অরুচি দূর হয়।
ত্বকের সমস্যাঃ শিশুদের ত্বকে যদি অতিরিক্ত ফুসকুড়ি, চুলকানি, বিভিন্ন এলার্জির জনিত সমস্যা দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে জিংক সিরাপ সেবন করালে ত্বকের সমস্যা দূর হয়।
ত্বকের খসখসে ভাবঃ অনেক শিশুদের ত্বক হয় কমল এবং মসৃণ আবার অনেক শিশুদের ত্বক হয় খসখসে। সাধারণত শরীরে জিংকের ঘাটতি হলে এরকম সমস্যা দেখা দেয়। এমন অবস্থায় জিংক সিরাপ সেবন করলে শিশুদের ত্বকের খসখসে ভাব দূর হয়।
ডায়রিয়ার সমস্যাঃ শিশুদের যদি নিয়মিত ডায়রিয়া পাতলা পায়খানা হয়, যে কোন খাবার গ্রহণ করলে খাবার হজম করতে পারছে না ডায়রিয়া হচ্ছে, এমন অবস্থায় জিংক সিরাপ সেবন করালে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা পরবর্তীতে কমে যায়।
হজম শক্তি কমে যায়ঃ অনেক সময় দেখা যায় শিশুরা যে খাবারগুলো খায় পায়খানা করার সময় সে খাবারগুলো বেরিয়ে যাই। যে কোন খাবার খেলে হজম হয় না, হজম শক্তি দুর্বল হয়ে যায়, কোন খাবার বেশি পরিমাণে খেলে পাতলা পায়খানা দেখা দেয়। এমন সময় জিংক সিরাপ সেবন করলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
শারীরিক দুর্বলতাঃ শিশুদের শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিলে শিশুর খাবারে অনিহা হয়। শিশু বিভিন্ন রোগ বালাইয়ে আক্রমিত হতে থাকে। শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এমন অবস্থায় জিংক সিরাপ সেবন করালে শিশুর শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়।
চুল উঠে যাওয়াঃ শিশুদের ক্ষেত্রে যদি চুল উঠে যাওয়া লক্ষ্য করেন সে ক্ষেত্রে জিংক সিরাপ সেবন করান। জিংক সিরাপ মাথায় নতুন চুল গজানোর পাশাপাশি মাথার চুল উঠা দূর করে।
স্বাদ গ্রহণে অনীহাঃ শিশুরা বিভিন্ন খাবার খাওয়ার পরও যদি বলে খেতে ভালো লাগছে না। বা কোন খাবার খাওয়ার পর স্বাধ পাচ্ছে না বিধায় খেতে চাচ্ছে না এমন অবস্থায় শিশুকে জিংক সিরাপ সেবন করালে স্বাদ গ্রহণের অনীহা দূর হয়।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ দেখা যায় শিশুর শরীরে নিয়মিত ঘন ঘন রোগ হচ্ছে। রোগ হলে ভালো হতে চাই না। নিয়মিত যেকোনো সমস্যায় শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। কোন রোগ হলে দীর্ঘ সময় লাগছে ভালো হতে এমন অবস্থায় শিশুকে জিংক সিরাপ সেবন করালে শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সহজে যেকোনো রোগ শিশুর শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না।
জিংক সিরাপ সুস্বাস্থ্যের জন্য এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি সচল রাখতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আশা করি জিংক সিরাপ এর কার্যকারিতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন।
জিংক সিরাপ ফর বেবি
বাচ্চাদের জন্য জিংক সিরাপ অত্যন্ত উপকারী। আপনি যদি আপনার শিশুকে প্রতিমাসে একটি করে জিঙ্ক সিরাপ সেবন করান আপনার শিশু থাকবে সুস্থ এবং সবল। হঠাৎ যেকোনো রোগে আপনার শিশু আক্রান্ত হবে না। শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অত্যন্ত উপকারী এই জিংক সিরাপ।
জিংক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম
জিংক সিরাপ শিশুদের জন্য উপকারী কিন্তু সেবন মাত্রায় জেনে আপনার শিশুকে জিংক সিরাপ সেবন করান। কেননা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সেবন করালে উপকারের চাইতে অপকার হওয়ার সম্ভাবনায় বেশি রয়েছে। প্রতিটি জিংক সিরাপ এর গায়ে শিশুদের জন্য সেবন বিধি নিয়ম দেওয়া থাকে। শিশুর শারীরিক ওজন অনুযায়ী জিংক সিরাপ সেবন করতে বলা হয়।
শারীরিক ওজন, ঔষধের পরিমাণ, খাবার সময়
- দৈহিক ওজন ১০ কেজি ৫ মিলি করে দিনে দুইবার খাবার পরে
- দৈহিক ওজন ১০ - ৩০ কেজি ১০ মিলি করে দিনে দুইবার খাবার পরে
- দৈহিক ওজন ৩০ - ৮০ কেজি ২০ মিলি করে দিনে দুইবার খাবার পরে
শিশু থেকে বয়স্ক পর্যন্ত প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই জিংক সিরাপ এর কার্যকারিতা প্রচুর। বিভিন্ন ভিটামিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে রাখে সুস্থ এবং নীরোগ।
ম্যাজিক জিংক সিরাপ
ম্যাজিক জিংক সিরাপে জিংক ভিটামিনের সকল উপাদান রয়েছে। এটি শিশুদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ম্যাজিক জিংক সিরাপ নিয়মিত সেবন করাতে পারেন। অন্যান্য জিংক সিরাপে যে ভিটামিন গুলো রয়েছে ম্যাজিক জিংক সিরাপেও সেই ভিটামিন গুলো রয়েছে। জিংক সিরাপ বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে প্রস্তুতকৃত।
বাচ্চাদের জিংক সিরাপ এর কাজ কি
জিংক সিরাপ খেলে কি হয় এবং বাচ্চাদের জিংক সিরাপ এর কাজ কি তা হল জিংক সিরাপ শিশুদের বিভিন্ন ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে। শিশুদের ত্বকের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি হাড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে। শিশুদের শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে জিংক সিরাপ অত্যন্ত উপকারী। হজম শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি রাতকানা রোগ দূর করতে সাহায্য করে।
শরীরের এলার্জিজনিত সমস্যা ও ত্বকের চুলকানি দূর করতে অত্যন্ত উপকারী। জিংক সিরাপ সেবনে ত্বকের খসখসে ভাব দূর হয়। মাথার চুল উঠে যাওয়া দূর করে নতুন চুল গজাতে অত্যন্ত সাহায্য করে। বিশেষ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে জিংক সিরাপ অত্যন্ত উপকারী।
জিংক সিরাপ এর দাম
বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির জিংক সিরাপ রয়েছে। কোম্পানি অনুযায়ী জিংকের নাম ও দামের তফাৎ রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির ক্ষেত্রে এর দামের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। ২০২৪ সাল অনুযায়ী নিম্নে শিশুদের বিভিন্ন জিংকের নাম ও দামের একটি তালিকা দেওয়া হলোঃ
- Zesup zinc syrup 100ml 45taka
- Mazic zinc syrup 100ml 35 taka
- Xinc syrup 100ml 50 taka
- Zinc B syrup 100ml 65 taka
- Bicozin zinc syrup 100ml 55 taka
উপরের প্রত্যেকটি ওষুধ শিশুদের জিংক এর ঘাটতি পূরণের জন্য সেবন করানো হয়। শিশুদের জন্য এই জিংক সিরাপ এর কার্যকারিতা অনেক। আপনি শিশুদের সেবন করানোর ক্ষেত্রে উপরের যে কোন জিংক সিরাপ সেবন করাতে পারেন।
জিংক সিরাপ এর অপকারিতা
জিংক সিরাপের অপকারিতা সম্পর্কে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন। জিংক সিরাপের তেমন কোন অপকারিতার নেই। জিংক সিরাপ বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি পূরণের জন্য সেবন করা হয়। অন্যান্য ওষুধের সাথে জিংক সিরাপ সেবন করলে এর উপকারিতা কমে যেতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত সেবন করলে অথবা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে বমি বমি ভাব অথবা বমি হয়, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা হওয়া, ডায়রিয়া বৃদ্ধি পাওয়া, বুকে জ্বালাপোড়া সহ পেটে ব্যথা হতে পারে।
লেখক এর মন্তব্য
জিংক সিরাপ এর কার্যকারিতা ও জিংক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের উদ্দেশ্যে লেখা। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন। জিংক সিরাপ সম্পর্কে সবগুলো প্রশ্নের সঠিক উত্তর আপনাদের মাঝে তুলে ধরেছি। এই প্রসঙ্গে যদি আপনার আরো কোন প্রশ্ন থাকে সে ক্ষেত্রে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
নিয়মিত এরকম আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটটি ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে তাহলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
প্রিয় টপিকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url