স্টেভিয়ার উপকারিতা, স্টেভিয়া চাষ পদ্ধতি, স্টেভিয়া গাছ সম্পর্কে
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য স্টেভিয়ার উপকারিতা প্রচুর। কেননা ডায়াবেটিস রোগীরা স্টেভিয়ার পাতার রস অথবা নির্যাস দ্বারা যে কোন মিষ্টি খাবার খেতে পারেন। এতে ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা দেখা দিবে না। অন্যদিকে আমাদের দেশে চিনির দাম যেভাবে হুড়হুড় করে বেড়েছে এতে স্টেভিয়া চাষ করে সহজে চিনি চাহিদা মেটানো সম্ভব। স্টেভিয়ার চাষ পদ্ধতি অনেক সহজ এটি প্রাকৃতিক ভাবেও জন্মাতে পারে।
স্টেভিয়ার চিনি আমাদের শরীরের জন্য কোন ক্ষতিকর নয়। বিধায় আমরা চিনির পরিবর্তে বা চিনির পাশাপাশি স্টেভিয়ার নির্যাস থেকে প্রস্তুতকৃত চিনি আমাদের খাবারে ব্যবহার করতে পারি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ স্টেভিয়ার উপকারিতা, স্টেভিয়া চাষ পদ্ধতি
.
ভূমিকাঃ
স্টেভিয়ার একটি গুল্ম ভেষজ জাতীয় উদ্ভিদ, এ রয়েছে নানান ঔষধি গুনাগুন। ঔষধি গুনাগুনের পাশাপাশি এর রয়েছে অত্যন্ত মিষ্টি স্বাদ যা চিনির তুলনায় ১০০ গুনেরো বেশি। এটি প্যারাগুয়ে পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। এ ছাড়া অন্যান্য দেশে কম বেশি প্রাকৃতিকভাবে পাহাড়ি অঞ্চলে জন্মে থাকে। ১৮৮৭ সালে একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী এম এস বার্থনি স্টেভিয়ার গুনাগুন ও মিষ্টি স্বাদ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন।
এটি চিনির তুলনায় ১০০ গুণ বেশি মিষ্টি। চিনির পাশাপাশি অথবা চিনি ছাড়া শুধুমাত্র ইস্টেভিয়ার নির্যাস দ্বারা যে কোন খাবার মিষ্টি সাদ যুক্ত করা যায়। এই মিষ্টি খাবার খেলে আমাদের শরীরের জন্য কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। স্টেভিয়া উৎপাদনে, স্টেভিয়ার চাষ করতে খরচ অত্যন্ত কম। চিনির চাইতে তুলনামূলক অধিক মিষ্টি হওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে প্রত্যেকটি দেশে স্টেভিয়া চাষ শুরু হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ তুলসী পাতার রস কোন রোগে বেশি উপকারী জেনে নিন
যে দেশগুলো অতিরিক্ত দামে চিনি কিনতে পারছে না সে দেশগুলোতে স্টেভিয়ার চাষ করে চিনির চাহিদা মেটানো যাবে। আজকের আর্টিকেলটিতে স্টেভিয়ার উপকারিতা, স্টেভিয়া চাষ পদ্ধতি স্টেভিয়া সম্পর্কে যাবতীয় সকল প্রশ্নের উত্তর থাকছে এই আর্টিকেলটিতে। বিস্তারিত জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।
স্টেভিয়ার উপকারিতা
স্টেভিয়ার উপকারিতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে স্টেভিয়া থেকে প্রস্তুতকৃত চিনি আমাদের মিষ্টি খাবারের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। আমাদের দেশে হুড়হুড় করে চিনির দাম বেড়েছে এতে সাধারণ পরিবারের লোকজন গরিব লোকেরা মিষ্টি খাবার খেতে পারছে না। কিন্তু স্টেভিয়ার নির্যাস থেকে প্রস্তুতকৃত চিনি আমাদের দেশের চিনির চাহিদা পূরণ করলে অল্প টাকায় চিনি কিনে আমরা মিষ্টি খাবার খেতে পারব।
এছাড়া ডায়াবেটিস রোগী যারা রয়েছেন তাদের মিষ্টি খাবার খাওয়া হয় না। কিন্তু এই স্টেভিয়ার চিনি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কোন প্রভাব ফেলে না। এই চিনি দ্বারা প্রস্তুতকৃত মিষ্টি খাবার ডায়াবেটিস রোগীরা ইচ্ছে মতো খেতে পারেন এতে কোন সমস্যা হবে না। তাছাড়া রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
এছাড়া স্টেভিয়ার পাতা চিবিয়ে খেলে শরীরে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করে। স্টেভিয়ার পাতা অথবা স্টেভিয়ার নির্যাস নিয়মিত খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এবং ত্বকের চর্মরোগ দূর করতে সাহায্য করে।
স্টেভিয়া গাছ
স্টেভিয়া গাছ দেখতে তুলসী গাছের মত। আকারে অনেক ছোট। এটি একটি ভেষজ উদ্ভিদ, এই গাছটি ১-২.৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতা ১ ইঞ্চি পরিমাণ লম্বা হয় যা তুলসী গাছের পাতার মত। এই গাছটি বংশবিস্তারের জন্য প্রাকৃতিকভাবে বীজের মাধ্যমে জন্মায়। কিন্তু যারা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন তারা এই গাছের কাণ্ড ব্যবহার করে নতুন গাছের চারা তৈরি করছেন। এই গাছটি যেকোনো ধরনের উর্বর মাটি ও আদ্র আবহাওয়াতে জন্মাতে পারে। আমাদের দেশ স্টেভিয়া চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
স্টেভিয়া কোথায় পাওয়া যায়
স্টেভিয়া যখন প্রাকৃতিকভাবে জন্মাতো তখন এই গাছটি প্যারাগুয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে জন্মাতো। এই গাছটির গুনাগুন জানার পর এই গাছটি এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হচ্ছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্টেভিয়া চাষাবাদ করা হচ্ছে। এই গাছটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে অত্যন্ত লাভবান হওয়া যায়।
এছাড়া অনেকেই নিজের পরিবারের চিনির চাহিদা পূরণের জন্য স্টেভিয়া গাছ লাগিয়েছেন। আপনি স্টেভিয়া গাছ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন নার্সারি অথবা স্টেভিয়া চাষির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। সবচাইতে রাজশাহী, ও নওগাঁ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে স্টেভিয়া চাষাবাদ করা হচ্ছে। আপনি রাজশাহীর যেকোনো চাষীর কাছে স্টেভিয়া চারা অথবা গাছ সংগ্রহ করতে পারেন।
স্টেভিয়ার পাতা কিসের বিকল্প
ইস্টেভিয়ার পাতা চিনির বিকল্প, স্টেভিয়ার পাতা ও নির্যাসে রয়েছে অত্যন্ত মিষ্টি স্বাদ। যা চিনির তুলনায় ১০০ গুন বেশি মিষ্টি। স্টিভিয়ার পাতা থেকে নির্যাস অথবা শুধুমাত্র পাতা থেকে মিষ্টি স্বাদযুক্ত চিনি তৈরি করা যায়। স্টেভিয়ার পাতা আখ, চিনি, গুড়, ও অন্যান্য মিষ্টি উপাদানের বিকল্প।
স্টেভিয়া পাউডার
স্টেভিয়া পাউডার ও স্টেভিয়া নির্যাস যেকোনো ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য স্টেভিয়া পাউডার অত্যন্ত উপকারী। স্টেভিয়ার পাউডারে রয়েছে অতিরিক্ত মিষ্টি স্বাদ যা চিনির বিকল্প হিসেবে কাজ করে। স্টেডিয়ার পাউডারে কোন ক্যালরি নেই, এই পাউডার গ্রহণ করলে রক্তের শর্করার মাত্রা কোন পরিবর্তন হয় না।
স্টেভিয়ার পাউডারে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ অনেক কম। যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত উপকারী। স্টেভিয়া পাউডার দ্বারা তৈরিকৃত মিষ্টি খাবার যেকোনো ডায়াবেটিস রোগী খেতে পারেন। স্টেভিয়া পাউডার দীর্ঘদিন যাবৎ সংরক্ষণ করা যায় প্রয়োজন মত যেকোনো মিষ্টি খাবার তৈরিতে স্টেভিয়া পাউডার ব্যবহার করা হয়।
স্টেভিয়া চাষ পদ্ধতি
স্টেভিয়ার চাষ করার জন্য সর্বপ্রথম উর্বর ঢালু জমি নির্বাচন করতে হয়। এরপর জমি ঝুরঝুরে করে চাষ করতে হয় পরিমান মত জৈব সার এবং রাসায়নিক সার অল্প পরিমাণে প্রয়োগ করে মাটিকে উর্বর করে নিতে হয়। এরপর এই গাছের চারা অথবা বীজ প্রতিটি গাছ থেকে ১ মিটার দূর দূর রোপন করতে হয়।
প্রতি ১০ দিন পর পর এ জমিতে একবার সেচ দিতে হয়। গাছের রং হালকা হলদে কালার ধারণ করলে শতক অনুযায়ী অল্প পরিমাণ ইউরিয়া সার দিতে হয়। এই গাছ একবার রোপন করলে ১.৫ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। এই গাছের পাতা একবার সংগ্রহ করলে পুনরায় ১০-১৫ দিন পর আবার সংগ্রহ করা যায়।
স্টেভিয়া চিনির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
স্টেভিয়ার চিনির তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে স্টিভিয়ার চিনি অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে কিছু কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, ফোলাভাব, পেটে গ্যাসের সমস্যা, এবং অল্পমাত্রায় লিভারের সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অতিরিক্ত মাত্রায় এই চিনি গ্রহণ না করলে কখনোই এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে না। তাই স্টেভিয়ার চিনি খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ততা এড়িয়ে চলুন।
স্টেভিয়া বীজ কোথায় পাওয়া যায়
আপনি স্টেভিয়া বীজ সংগ্রহের জন্য স্টেভিয়া চাষীর সাথে যোগাযোগ করুন। এছাড়া বিভিন্ন বীজ ভান্ডারে স্টেভিয়ার বীজ বিক্রয় করা হয় আপনি সেখানে যোগাযোগ করতে পারেন। বর্তমানে আমাদের দেশে সিড বাজার স্টেভিয়ার বীজ বিক্রয় করছে আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া বিশ্বস্ত ভাবে হাইজেন স্টেভিয়া গ্রুপ স্টেভিয়ার বীজ বিক্রয় করছেন আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
স্টেভিয়া চারা কোথায় পাওয়া যায়
স্টেভিয়ার উপকারিতা অনেক বিধায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ স্টেভিয়ার চাষ করার জন্য স্টেভিয়ার চারা কিনতে আগ্রহ বোধ করেন। কিন্তু স্টেভিয়া চারা সব জায়গায় পাওয়া যায় না বিধায় সংগ্রহ করা তেমন সহজ নয়। স্টেডিয়ার চারা সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশের ৬২ জেলায় যে সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে সেগুলোতে যোগাযোগ করতে পারেন।
অথবা নিজের জেলায় যারা স্টেভিয়ার চাষ করছেন তাদের কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়া স্টেভিয়া নার্সারি বারিধারা ঢাকা বাংলাদেশ এ নার্সারি থেকে আপনারা ইস্টেভিয়ার চারা সংগ্রহ করতে পারেন।
লেখক এর মন্তব্য
স্টেভিয়া একটি গুল্ম জাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ। এ রয়েছে ঔষধি গুনাগুনের পাশাপাশি অতিরিক্ত মিষ্টি স্বাদ। যা আমাদের মিষ্টি খাবারের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত স্টেভিয়া খাবারের সাথে খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই যে কোন খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্টেভিয়ার চিনি ব্যবহার করুন। অনেকে স্টেভিয়ার উপকারিতা স্টেভিয়া চাষ পদ্ধতির সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন আজকে আর্টিকেলটি তাদের উদ্দেশ্যে লেখা।
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন। আজকের আর্টিকেলটিতে স্টেভিয়া বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি। আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করুন। নিয়মিত এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটে ভিজিট করুন। আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের ক্যাটাগরি গুলো ঘুরে আসুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।