শিশুদের গুড়া কৃমির ওষুধের নাম - শিশুদের গুড়া কৃমি হলে করনীয়
শিশুদের গুড়া কৃমির ওষুধের নাম জানলে আপনি চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে শিশুদের গুড়া কৃমির চিকিৎসা করতে পারবেন। গুড়া কৃমি শিশুদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। শিশুদের গুড়া কৃমি হলে করণীয়, ও গুড়া কৃমি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর থাকছে আজকের আর্টিকেলটিতে।
গুড়া কৃমি প্রত্যেকটি শিশুর কমন একটি সমস্যা। যেকোনো শিশুর ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি অহরহ দেখা যায়। খুব সহজেই সামান্য কিছু নিয়মে শিশুদের গুড়া কৃমি খুব সহজে দূর করতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ শিশুদের গুড়া কৃমির ওষুধের নাম - শিশুদের গুড়া কৃমি হলে করনীয়
.
ভূমিকাঃ
গুড়া কৃমি শরীরের একটি পরজীবী। শিশুর শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ভিটামিন গ্রহণ করে এরা বেঁচে থাকে। অল্প বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা সবচাইতে বেশি দেখা যায়। তবে সতর্ক হলে খুব সহজে গুড়া কৃমি দূর করা সম্ভব। গুড়া কৃমি আক্রমণ করলে শিশু দিন দিন দুর্বল হয়ে যায়। শিশুর শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন গুড়া কৃমির চুষে নেয়। ফলে শিশুর কোন স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় না। দীর্ঘদিন ধরে শিশু গুড়া কৃমিতে আক্রান্ত থাকলে শিশুর শরীরে স্বাভাবিক উন্নতি ব্যাহত হয়।
গুড়া কৃমি দূর করার উপায়
আপনার সন্তানকে গুড়া কৃমি আক্রমণ করলে খুব সহজেই কিছু উপায় অবলম্বন করলে গুড়া কৃমি দূর করতে পারবেন। গুড়া কৃমি দূর করার জন্য চিকিৎসা ও ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারেন। চিকিৎসার মাধ্যমে নির্ধারিত সময় পর পর ওষুধ সেবন করতে হয়। ঘরোয়া উপায়ে অবলম্বন করলে বিশেষ কিছু নিয়মের মাধ্যমে গুড়া কৃমি দূর করতে পারবেন। গুড়া কৃমি দূর করার জন্য ওষুধের চাইতে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
গুড়া কৃমি হওয়ার কারণ
কৃমি হওয়ার প্রধান কারণ হলো অপরিষ্কার ভাবে খাবার খাওয়া। পিনওয়ার্ম বা গুড়া কৃমি হওয়ার প্রধান কারণ হলো নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। শিশুরা অনেক সময় মাটিতে খেলাধুলা করে এমন সময় নোংরা পরিবেশে থাকা কৃমির ডিম হাতে নখের মাধ্যমে মুখে প্রবেশ করে। এছাড়া কিছু কিছু কৃমি আছে যা পায়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে যা সাধারণ চোখে দেখা যায় না।
খেলাধুলার পর হাত না ধুয়ে খাবার খেলে কৃমি হয়। বাসি খাবার খেলে কৃমি হয়। এছাড়া বাজারের অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে তৈরি হওয়া বিস্কিট ও ময়দা থেকে তৈরি বিভিন্ন খাবার শিশুদের শরীরে কৃমি বৃদ্ধি করে। গুড়া কৃমি শিশুদের মলদ্বারে তার বংশবৃদ্ধি করে এবং মলে ডিম পাড়ে। মল থেকে এই ডিম পরিবেশে ছড়ায় এবং পুনরায় খাবার ও হাতের নখের মাধ্যমে শিশু থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি বয়সের লোকের শরীরে প্রবেশ করে।
শিশুদের গুড়া কৃমির ওষুধের নাম
শিশুদের কৃমির ঔষধ এর নাম সম্পর্কে জানা থাকলে খুব সহজেই শিশুদের গুড়া ক্রিমর চিকিৎসা করা যায়। চিকিৎসকের মতে গুড়া কৃমি শিশুর শরীর ও স্বাস্থ্যের উন্নতি ব্যাহত করে। শিশুদের গুড়া কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর মাধ্যমে খুব সহজে গুড়া কৃমি দূর হয়। যদি ওষুধের মাধ্যমে গুড়া কৃমি দূর করেন সেক্ষেত্রে প্রথম ডোজ ঔষধ খাওয়ানোর সাত দিন পর দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে একই ওষুধ খাওয়ালে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
কেননা একবার ওষুধ খাওয়ালে পেটের কৃমি দূর হয় কিন্তু সাত দিনের মধ্যেই আবার ক্রিমির ডিম ফুটে পুনরায় বংশবিস্তার করে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির গুড়া কৃমির ওষুধ পাওয়া যায়। শিশুদের গুড়া কৃমির ওষুধের নাম কোম্পানি অনুযায়ী আলাদা আলাদা হয়। শিশুদের গুড়া কৃমির চিকিৎসায় ব্যবহৃত সবচাইতে ভালো কিছু ওষুধের তালিকা দেওয়া হলো।
- Almex 400mg
- Albendazole 400mg
- Alben 400mg
- Bendex 400mg
- Vermicid SMC
উল্লেখিত ঔষধ গুলো গুড়া কৃমির চিকিৎসায় শিশুদের সেবন করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। আপনি এই ওষুধগুলোর মধ্যে থেকে যে কোন ঔষধ শিশুদের খাওয়াতে পারেন। আশা করি শিশুদের গুড়া কৃমির ওষুধের নাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন।
শিশুদের গুড়া কৃমি হলে করনীয়
বাচ্চাদের গুড়া কৃমি হলে করনীয় কি একাধিক উপায়ে গুড়া কৃমি দূর করতে পারবেন। গুড়া কৃমি দূর করার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আপনি ঔষধের মাধ্যমে গুড়া কৃমি দূর করতে পারবেন। গুড়া কৃমি দূর করার জন্য নিয়ম অনুযায়ী শিশুকে ওষুধ খাওয়ান। এছাড়া ঘরোয়া উপায়ে গুড়া কৃমি দূর করতে পারবেন।
প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা ভেষজ গাছপালার মাধ্যমে গুড়া কৃমির চিকিৎসা করা যায়। শিশুদের গুড়া কৃমি হলে করণীয় হলো ওষুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি ঘরোয়া কিছু নিয়ম অবলম্বন করা। ঘরোয়া উপায় মেনে চললে গুড়া কৃমির হাত থেকে শিশু দীর্ঘদিন সুস্থ থাকে।
গুড়া কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
শিশুদের গুড়া কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম হলো শিশুর বয়স দুই বছরের বেশি হলে শিশুকে সিরাপ খাওয়াতে পারেন। যেকোনো সিরাপ একবার খাওয়ানোর সাত দিন পর পুনরায় একই ভাবে ওই সিরাপ সেবন করান। খুব ভালো ফল পাবেন। কৃমির ওষুধ সেবন করার পূর্বে মিষ্টি যে কোন খাবার খেয়ে কৃমির ওষুধ সেবন করুন। অল্প বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে কৃমির ওষুধ সেবন করা পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কৃমির ওষুধ রাতে ঘুমানোর পূর্বে শিশুকে সেবন করান।
গুড়া কৃমির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
গুড়া কৃমির চিকিৎসায় এলোপ্যাথিক ও ঘরোয়া চিকিৎসার পাশাপাশি হোমিও চিকিৎসা করা যায়। গুড়া কৃমির চিকিৎসায় হোমিও ঔষধ শিশুকে সেবন করালে শিশু দীর্ঘদিন সুস্থ থাকে। এলোপ্যাথিক যে কোন সিরাপ খাওয়ার তিন মাসের পূর্বেই শিশু আবার কৃমির সমস্যা আক্রান্ত হয়। কিন্তু হোমিও চিকিৎসায় তিন মাস ধরেই শিশু সুস্থ থাকে।
হোমিও বিভিন্ন ঔষধ শিশুদের কৃমির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। আপনার শিশুর যদি এলোপ্যাথিক ওষুধ খাওয়ার পরেও কৃমির সমস্যা দূর না হয় সেক্ষেত্রে হোমিও চিকিৎসা নিন। হোমিও চিকিৎসা নেয়ার জন্য নিজে কোন হোমিও ঔষধ প্রয়োগ না করে একজন রেজিস্টার্ড হোমিও চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে আপনার শিশুকে ওষুধ সেবন করান।
গুড়া কৃমির প্রাকৃতিক ঔষধ
গুড়া কৃমির প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে বিভিন্ন গাছ ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহারিত হয়। নিয়মিত শিশুকে নিয়ম মেনে ভেষজ ঔষধ হিসেবে গাছের বাকোল, পাতা, রস, সেবন করালে শিশু দীর্ঘদিন সুস্থ থাকে।
গুড়া কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায়
ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে খুব সহজে কৃমি সমস্যা দূর করা যায়। কিন্তু অনেকেই শিশুদের গুড়া কৃমির ওষুধের নাম জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু ওষুধের চাইতে শিশুদের জন্য ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা অত্যন্ত উপকারী। ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে গুড়া কৃমি দূর করতে যে উপায় গুলো অবলম্বন করা হয় তা নিচে বর্ণনা করা হলোঃ
- নিমপাতা
- করলা জুস
- বাসক পাতা
- অর্জুন গাছের ছাল
- কালো জিরা
- মেথি শাক
- রসুন
নিমপাতাঃ নিয়মিত সকালে পরিষ্কার একমুঠো নিম পাতা থেকে রস বের করুন। প্রতিদিন সকালে এক সপ্তাহ আপনার শিশুকে দুই চামচ করে সকালে খালি পেটে নিমপাতা রস খাওয়ালে গুড়া কৃমি দূর হবে।
করলা জুসঃ দেশী করোলা জুস কৃমি দূর করতে অত্যন্ত উপকারী। আপনি ব্লেন্ডারের মাধ্যমে করলা জুস প্রস্তুত করুন এরপর নিয়ম মেনে প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় খাবার আগে দুই চামচ করে করলার জুস আপনার শিশুকে সেবন করান দ্রুত গুড়া কৃমি দূর হবে।
বাসক পাতাঃ ঘরোয়া চিকিৎসায় বাসক পাতা কৃমি দূর করতে অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত সকালে খালি পেটে বাসক পাতার রস অথবা কয়েক টুকরো বাসক পাতা এক সপ্তাহ খেলে পেটের গুড়া কৃমি দূর হয়।
অর্জুন গাছের ছালঃ পেটের গুড়া কৃমি দূর করতে অর্জুন গাছের ছাল অত্যন্ত উপকারী। অর্জুন গাছের ছাল পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এরপর পানি ছেঁকে নিয়ে সকালে ও সন্ধ্যায় খালি পেটে আপনার শিশুকে সেবন করান দ্রুত গুড়া কৃমি দূর হবে।
কালো জিরাঃ পেটের গুড়া কৃমি দূর করতে কালোজিরা অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন সকালে আপনার শিশুকে এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা চিবিয়ে খেতে বলুন। এতে খুব সহজেই গুড়া কৃমি দীর্ঘদিন দূরে থাকবে।
মেথি শাকঃ শিশুর গুড়া কৃমি দূর করার জন্য মেথি শাক অত্যন্ত উপকারী। সবুজ শাকসবজির পাশাপাশি খাবারের তালিকায় মেথি শাক যুক্ত করুন পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পেটের গুড়া কৃমি দূর করতে সাহায্য করবে।
রসুনঃ গুড়া কৃমি দূর করার জন্য কাঁচা রসুন অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় এক থেকে দুই টুকরো কাঁচা রসুন থেতো করে চিবিয়ে আপনার শিশুকে খেতে বলুন। এক সপ্তাহ এভাবে কাঁচা রসুন খেলে খুব সহজে গুড়া কৃমি দূর হবে।
লেখকের মন্তব্য
অনেক বাবা মা শিশুদের গুড়া কৃমির ওষুধের নাম ও গুড়া কৃমি হলে করনীয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের উদ্দেশ্যে লেখা। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। এবং উল্লেখিত নিয়মে আপনার শিশুর চিকিৎসা করলে খুব সহজে গুড়া কৃমির হাত থেকে দীর্ঘদিন আপনার শিশুকে সুস্থ রাখতে পারবেন।
আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন নিয়মিত এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটে ভিজিট করুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।