গরুর জিংক সিরাপ এর উপকারিতা, নাম, দাম, খাওয়ানোর নিয়ম
গরুর দ্রুত মাংস বৃদ্ধির জন্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য, দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য, গরুর প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি পূরণের জন্য গরুর জিংক সিরাপ এর উপকারিতা প্রচুর। সঠিক উপায়ে গরুর জিংক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী গরুকে জিংক সিরাপ খাওয়ালে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
গবাদি পশুর বিভিন্ন চিকিৎসায়, বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য জিংক সিরাপ অত্যন্ত উপকারী। গরুর বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি গরুর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে, এবং প্রজনন ক্ষমতা সঠিক রাখতে জিংক সিরাপের বিকল্পে কিছু নেই।
পোস্ট সূচিপত্রঃ গরুর জিংক সিরাপ এর উপকারিতা - গরুর জিংক খাওয়ার নিয়ম
.
ভূমিকাঃ
গরুর জিংক সিরাপ ভিটামিন, মিনারেল, খনিজ উপাদানের সংমিশ্রণের প্রস্তুতকৃত, গরুর শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য, ও দৈহিক ওজন বৃদ্ধির জন্য জিংক সিরাপ অত্যন্ত কার্যকরী। একটি গাভী দীর্ঘদিন দুধ দেওয়ার ফলে গাভী অত্যন্ত দুর্বল ও পুষ্টিহীন হয়ে পড়ে এমন অবস্থায় গরুকে জিংক সিরাপ সেবন করালে গরুর শরীরে সুস্থতা ফিরে আসে।
প্রয়োজনীয় ভিটামিনের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে জিংক সিরাপ অত্যন্ত কার্যকরী। গরুর জিংক সিরাপ এর উপকারিতা, গরুর জিংক খাওয়ার নিয়ম ও জিংক সম্পর্কে নানাবিধ প্রশ্নের সঠিক উত্তর থাকছে আজকের আর্টিকেলটিতে। বিস্তারিত জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
গরুর জিংক সিরাপ
গরুর শরীরের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের জন্য ট্রেস মিনারেলের প্রয়োজন হয়। এই ট্রেস মিনারেল গরু সবুজ ঘাস থেকে পেয়ে থাকে। যেসব গরু নিয়মিত সবুজ ঘাস খেতে পায় এই গরুগুলোর শরীরে জিংকের তেমন ঘাটতি হয় না। কিন্তু যে গরু গুলোকে শুধুমাত্র শুকনো খড় খাওয়ানো হয় এই গরুগুলোর জিংকের ঘাটতি হয়।
চিকিৎসকদের মতে জিংকের অভাবে পশুর শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে। স্বাস্থ্য বিকৃতি হওয়ার পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি কমে যায় গরু অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যায়। গরুর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে জিংক সিরাপ অত্যন্ত কার্যকরী
গরুর জিংক সিরাপ এর উপকারিতা
দীর্ঘদিন একটি গাভীর দুধ দেওয়ার ফলে, ও অধিক বছর ধরে বাচ্চা প্রসব করার ফলে গাভী অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে যায়। শরীরে দেখা দেয় বিভিন্ন রোগ, কমে যায় প্রজনন ক্ষমতা আগের তুলনায় গাভী তেমন হিটে আসে না। শরীর অনেক রোগাটে হয়ে যায় দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। এই সমস্যাগুলো দূর করতে জিংক সিরাপ অত্যন্ত কার্যকরী।
গরুর জন্য জিংক সিরাপ কতটা উপকারী। গরুর শরীরের যে রোগ গুলো জিংক সিরাপ সেবন করানোর মাধ্যমে দূর করা যায় সেগুলো সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
- অরুচি ভাব দূর করে
- ডায়রিয়ার সমস্যা দূর করে
- ম্যাসটাইটিস রোগ প্রতিরোধ করে
- পশম উঠে যাওয়া রোধ করে
- চর্মরোগ দূর করে
- পা ফোলার সমস্যা দূর করে
- ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে
- পশম খাওয়া রোধ করে
- প্যারাক্যারাটোসিস রোগ দূর করে
- হাইপারক্যারাটোসিস রোগ দূর করে
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- হাড়ের ক্ষয় রোধ করে
- হ্মুরের গঠন ঠিক রাখে
- দুর্বল অন্ডকোষকে সুস্থ করে
- প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- দৈহিক ওজন বৃদ্ধি করে
- দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করে
- গরুর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
- পুষ্টিহীনতা দূর করে
অরুচি ভাবঃ গরু দুর্বল হয়ে গেলে খাবারে অরুচি দেখা দেয়। ঠিকমত যে কোন খাবার খেতে চাই না। অল্প খাবার খেয়েই খাবার খাওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পাওয়ায় গরু দুর্বল হয়ে যায়। এমন অবস্থায় গরুকে জিংক সিরাপ সেবন করালে গরুর রুচি বৃদ্ধি হয়।
ডায়রিয়াঃ গরুকে ভালো খাবার খাওয়ালে অথবা যে কোন খাবার একটু বেশি পরিমাণে খেলে দেখা যায় গরুর নিয়মিত পাতলা পায়খানা হয়। পাতলা পায়খানা হলে ভালো হতে চাই না এমন অবস্থায় গরুকে জিংক সিরাপ খাওয়ালে ডায়রিয়ার সমস্যা দূর হয়।
ম্যাসটাইটিস রোগঃ অনেক গরুর ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় গরুর ওলান ফুলে যায়, দুধ হয় না, অথবা গরুর বাটে সাপের দাঁতে কাটার মত আঁচড় থাকে। গরুর বাট ফেটে যায় এই সমস্যাকে ম্যাসটাইটিস রোগ বলা হয়। যে গাভীর এরকম সমস্যা দেখা দেয় সে গরুকে জিংক সিরাপ সেবন করালে ম্যাসটাইটিস রোগ সেরে যায়
লোমপাড়াঃ অনেক গরুর ক্ষেত্রে দেখা যায় শরীরের পশম উঠে যায়। বিভিন্ন জায়গায় পশম উঠে শরীরের চামড়া দেখা যায় সব সময় গরু গা চাটতে থাকে এমন অবস্থায় গরুকে জিংক সিরাপ খাওয়ালে নতুন লোম গজায় ও লোম ওঠা বন্ধ হয়।
চর্মরোগঃ গরুর শরীরে জিংকের ঘাটতি হলে চর্মরোগ বৃদ্ধি হয়। গরুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঘা, চুলকানি ও বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা যায়। এমন অবস্থায় গরুকে জিংক সিরাপ সেবন করানো প্রয়োজন৷
ক্ষত নিরাময়ঃ অনেক সময় দেখা যায় গরুর শরীরে কোন ক্ষত হলে সে ক্ষত শুকাতে চায় না ভালো হতে দীর্ঘ সময় নেয়। তখন গরুকে জিংক সিরাপ সেবন করালে দ্রুত গরুর শরীরের ক্ষত শুকিয়ে যায়।
এছাড়া গরুকে জিংক সিরাপ সেবন করালে এর চাইতে অনেক বেশি উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। তাই একটি গাভীকে সুস্থ রাখতে কমপক্ষে এক মাস পর পর জিংক সিরাপ সেবন করানো উচিত। আশা করি গরুর জিংক সিরাপ এর উপকারিতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন।
গরুর জিংক খাওয়ার নিয়ম
গরু, মহিষ, ভেড়া, ও অন্যান্য পোষা প্রাণীর ক্ষেত্রে দৈহিক ওজন অনুযায়ী জিংক সিরাপ সেবন করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। খাবার পানির সাথে মিশিয়ে অথবা যে কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে জিংক সিরাপ সেবন করাতে হয়। নিচে দৈহিক ওজনের উপর জিংক সিরাপ সেবন করার একটি তালিকা দেওয়া হলোঃ
১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০০মিলি দিনে দুইবার ৫-৭ দিন
৫০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৫০মিলি দিনে দুইবার ৫-৭ দিন
৩০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২০মিলি দিনে দুইবার ৫-৭ দিন
৫০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৫০মিলি দিনে দুইবার ৫-৭ দিন
৩০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২০মিলি দিনে দুইবার ৫-৭ দিন
গরুর জন্য কোন জিংক ভালো
বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন জিংক পাওয়া যায়। কমবেশি প্রত্যেকটি জিংকের একই কার্যকারিতা রয়েছে। প্রত্যেকটি কোম্পানি জিংকের কার্যকারিতা সঠিক রেখে জিংক প্রস্তুত করেছেন। বাজারের কিছু ভালো কোম্পানির গরুর জিংক সিরাপের একটি তালিকা দেওয়া হলঃ
- Azinc Vet
- Xinc Care
- ZS zinc
- Zis vet
- Adzinc
- Orozinc
- One zinc
- Solu zinc
- Xinc B
- Vita Zinc
- Zinc met
উল্লেখিত প্রত্যেকটি জিংক গরুর জিংক ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের চিকিৎসায় ব্যবহারিত হয়। আপনি এই জিংক গুলোর মধ্যে থেকে যেকোনো জিংক গরুকে খাওয়াতে পারেন।
গরুকে জিংক কিভাবে দিতে হয়?
নিয়মিত যে কোন খাবারের সাথে আপনি গরুকে জিংক খাওয়াতে পারেন। খাবার পানির সাথে দিনে দুইবার পরিমাণ মতো জিংক মিশিয়ে গরুকে খাওয়াতে পারেন। অথবা কাঁচা ঘাসের অথবা খড়ের সাথে মিশিয়ে গরুকে জিংক খাওয়াতে পারেন। দিনে দুইবার ৫ থেকে ৭ দিন গরুর ওজনের উপর ভিত্তি করে জিংক সিরাপ খাওয়াতে হয়।
গরুর জন্য জিংক কি ভালো?
গরুর বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, দ্রুত দৈহিক ওজন বৃদ্ধি করতে জিংক সিরাপ অত্যন্ত কার্যকরী। গাভীর ক্ষেত্রে প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জিংক সিরাপ অত্যন্ত উপকারী। গাভীকে স্বাস্থ্যবান রাখতে খাবারে রুচির বৃদ্ধির জন্য এবং শরীরের পর্যাপ্ত ভিটামিনের চাহিদা পূরণের জন্য গরুর জিংক সিরাপ এর উপকারিতা অনেক। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় গরুর জন্য জিংক সিরাপ ভালো।
গরুর জিংক সিরাপ এর দাম
সাধারণত কোম্পানির মান ও পণ্যের গুণগত মানের উপর ভিত্তি করে জিংক এর দাম কমবেশি হয়। এছাড়া বোতলের সাইজ লিটার, ও মিলি অনুযায়ী কিনলে, তুলনামূলক লিটারের চাইতে মিলি অনুযায়ী জিংকের দাম অনেক বেশি। তবে আপনি যেকোন জায়গাতে অথবা যে কোন ফার্মেসিতে বিভিন্ন কোম্পানির জিংক প্রতি লিটার ২৩০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন। তবে সময় ও স্থানভেদে এর দাম কিছুটা কম বেশি হতে পারে।
লেখক এর মন্তব্য
গরুর জিংক সিরাপ এর উপকারিতা, গরুর জিংক খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন আজকে আর্টিকেলটি তাদের উদ্দেশ্যে লিখা। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন। আজকের আর্টিকেলটিতে গরুর জিংক বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি। এর বাইরে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। নিয়মিত এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটটি ভিজিট করুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।