বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে করণীয়, ডায়রিয়ায় শিশু কি খাবে, খাবেনা

ডায়রিয়া হল ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি পানিবাহিত রোগ। যা বিভিন্নভাবে শিশু থেকে বয়স্কদের প্রত্যেকের শরীরে ছড়িয়ে থাকে। বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে করণীয় হল দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া। বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে কি খাওয়া উচিত এবং ডায়রিয়া সম্পর্কে বিভিন্ন বিস্তারিত থাকছে আজকের আর্টিকেলটিতে।
বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে করণীয় - বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে কি খাওয়া উচিত
বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়া ছড়িয়ে থাকে তবে বয়স্কদের চাইতে শিশুরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। ডায়রিয়া হলে শরীরের পানি শূন্যতা হয়ে যায়। ডায়রিয়া হলে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে প্রত্যেক বয়সের মানুষই মৃত্যুর মুখে পতিত হয়।

পোস্ট সূচিপত্রঃ বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে করণীয় - বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে কি খাওয়া উচিত

.

বাচ্চাদের ডায়রিয়ার লক্ষণ

ডায়রিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা ছোট বড় কমবেশি প্রত্যেকের শরীরকে দ্রুত আক্রান্ত করতে পারে। ডায়রিয়া হওয়ার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই শরীর দুর্বল হয়ে যায়। বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে বয়স্কদের চাইতে বেশি অসুস্থ হয়ে যায়। ডায়রিয়ার বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যে লক্ষণ গুলো দেখলে বুঝবেন যে বাচ্চা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এমন সময় দ্রুত বাচ্চার চিকিৎসা করুন নয়তো বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। ডায়রিয়ার কিছু লক্ষণ নিচে দেওয়া হলঃ
  • দিনে তিনবারের বেশি তরল পায়খানা হওয়া
  • পায়খানার সাথে তরল পানি বের হওয়া
  • পেট ফেপে যাওয়া
  • শরীরে পানি শূন্যতা হওয়া
  • পেট ব্যথা হওয়া
  • বমি বমি ভাব হওয়া
  • বমি হওয়া
  • ফেনা যুক্ত পায়খানা হওয়া
  • শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া
  • ঘনঘন পায়খানা হওয়া
  • পেশাবের রং হলুদ বর্ণ ধারণ করা
  • মাথা ঘুরানো
  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগা
  • প্রতিদিনের তুলনায় কম প্রসাব হওয়া
উল্লেখিত লক্ষণগুলো শিশুদের ডায়রিয়া হলে দেখা যায়। তবে ডায়রিয়া হলে সাধারণত ৫-৬ বারের বেশি পায়খানা হয়। শরীর থেকে অধিক পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায় ফলে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। এমন অবস্থায় বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে করণীয় হলো বেশি বেশি স্যালাইনযুক্ত পানি খাওয়ানো।

বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে করণীয়

ডায়রিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ, শিশুকে যখন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ায় আক্রমণ করে তখন শিশুর ডায়রিয়ার মত সমস্যায় পড়ে। এমন অবস্থায় শিশুর পাঁচ থেকে ছয় বারের বেশি পাতলা পায়খানা হয়। পাতলা পায়খানার সাথে শরীরের পানি বেরিয়ে যায়। শুধুমাত্র তরল পাতলা পায়খানা হতেই থাকে যা থামার কোন নামই নেয় না। 
বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে শরীরের প্রচুর পরিমাণে পানি ক্ষরণ হয়। এমন অবস্থায় শিশুদের পানি শূন্যতা পূরণের জন্য প্রচুর পরিমাণে স্যালাইন ও তরল খাবার খাওয়ানো। ঔষধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই বেশি বেশি স্যালাইন খাওয়াতে হবে। যদি স্যালাইন বাসায় না থাকে বাজার থেকে নিয়ে আসতে দেরি হয় এমন অবস্থায় দ্রুত বাসায় তৈরি স্যালাইন খাওয়ান। 

যদি অতিরিক্ত শিশুর ডায়রিয়া হয় শিশু অচেতন হয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে শরীরের পানি শূন্যতা দূর করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শীরার মাধ্যমে স্যালাইন তুলতে হবে। কোন ভাবেই শিশুর খাবার বন্ধ করা যাবে না। শিশু যদি বুকের দুধ খায় সে ক্ষেত্রে ঘন ঘন শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এমন সময় ডাবের পানি, ভাতের মাড়, ফলের জুস, স্যালাইন যুক্ত পানি, চিড়া ভিজিয়ে রাখা পানি, প্রচুর পরিমাণে শিশুকে খাওয়ান। 

ডায়রিয়া খুব কম সময় দীর্ঘস্থায়ী হয় সাধারণত ডায়রিয়া হলে ৩-৭ দিনের মধ্যে ডায়রিয়া ভালো হয়ে যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে ডায়রিয়া সারতে দেরি হতে পারে। কোন ভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডায়রিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক বাচ্চাকে সেবন করাবেন না। আশা করি বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে করণীয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন।

বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে কি খাওয়া উচিত

প্রতি বছরই সবচাইতে বেশি শীতকালীন সময় শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। গরমকালেও কমবেশি শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। অনেক বাবা মা আছে যারা জানেন না বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে কি খাবার খাওয়াবেন। ডায়রিয়া যেহেতু একটি ভাইরাস জনিত রোগ এ রোগে শরীরের তরল পদার্থ ও প্রচুর পরিমাণে পানি শরীর থেকে বের হয়ে যায়। 
বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে করণীয় - বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে কি খাওয়া উচিত
তাই পানির চাহিদা পূরণের জন্য বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার শিশুকে খাওয়ানো উচিত। ডায়রিয়া হলে কোন ভাবেই খাবার বন্ধ রাখা যাবে না। তবে যে খাবারগুলো হজম করতে সমস্যা হয় এবং হজম হতে দেরি হয় এই খাবারগুলো বাচ্চাদের খাওয়ানো যাবে না। বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে কি খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে নিম্নে পয়েন্ট আকার দেওয়া হলঃ
  • প্রচুর পরিমাণে স্যালাইন পানি
  • টাটকা ফলের জুস
  • শরবত, লিকার চা
  • প্রচুর পরিমাণে বুকের দুধ
  • ভাতের মাড়, চিড়া ভিজিয়ে রাখা পানি
  • প্রচুর পরিমাণে ডাবের পানি,
  • খিচুড়ি ভাত, রান্নাকরা কাঁচা কলা,
  • ডালিম, ডিমের সাদা অংশ, পাকা কলা, পেঁপে
  • টক দই, চিকেন সুপ, ডালের পানি, চালের গুড়া দিয়ে তৈরীকৃত খাবার
উল্লেখিত খাবার গুলো ডায়রিয়া হলে বাচ্চাকে প্রচুর পরিমাণে খাওয়াতে পারেন। বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে করণীয় হল প্রচুর পরিমাণে তরল খাবারের সাথে উল্লেখিত খাবারগুলো খাওয়ানো। কখনোই ডায়রিয়া হলে খাবার খাওয়াতে অনিহা প্রকাশ করবেন না। তবে বেশি বেশি তরল যুক্ত খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে কি ফল খাওয়া যাবে

বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে প্রচুর পরিমাণে শরীরের পটাশিয়াম ও তরল বের হয়ে যায় ফলে শরীর স্বাভাবিক এর চাইতে অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে বেশি বেশি পটাশিয়াম যুক্ত ফল অথবা ফলের জুস খাওয়াতে পারেন। ডায়রিয়া হলে যে ফল অথবা ফলের জুস বাচ্চাদের খাওয়াবেন তার একটি তালিকা দেওয়া হলঃ
  • কাঁচা কলা, পাকা কলা, আম
  • কিসমিস, আনারস, পেঁপে,
  • ডাব, নারিকেলের দুধ,
  • লেবু, লেবুর শরবত
  • আনার, বেদানা, আপেল
  • কমলা, তরমুজ জুস,
  • খেজুর, অ্যাভোকাডো, কুমড়ো
  • মিষ্টি আলু, বাদাম, গাজর
উল্লেখিত ফল অথবা ফলের জুস আপনার শিশুর ডায়রিয়া হলে খাওয়াতে পারেন। যদি শিশু ফল খেতে না চায় সেক্ষেত্রে ফলের জুস তৈরি করে খাওয়াতে পারেন। এতে দ্রুত শরীরে তরলের ঘাটতি পূরণ হবে। বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে করণীয় হলো স্যালাইনের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে তরল ফলের জুস খাওয়া।

বাচ্চাদের ডায়রিয়ার ওষুধ

বাচ্চার ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকরা বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে থাকেন। তবে অবশ্যই লক্ষণ ও পায়খানার ধরন অনুযায়ী ওষুধ সেবন করানো প্রয়োজন। বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে কি ওষুধ খাওয়াবেন তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলঃ
  • Zox 30ml
  • Ciprocin 250 60ml
  • Amodis 60ml
  • Zesup 100ml
  • Filmet 60ml
  • Metro 60ml
  • B- Zn 100ml
  • Metryl 60ml
উল্লেখিত ঔষধ গুলো শিশুর ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানার চিকিৎসায় সেবন করানো হয়। আপনি এই ওষুধগুলোর মধ্যে যে কোন ঔষধ ডায়রিয়ার চিকিৎসায় শিশুকে সেবন করাতে পারেন। তবে সেবন করানোর পূর্বে অবশ্যই কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন।

বাচ্চাদের ডায়রিয়ার টিকা

ডায়রিয়ার একটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত সমস্যা। ডায়রিয়ার জন্য রোটাভাইরাস, হেপাটাইটিস এ ভাইরাস দায়ী। সবচাইতে শীতকালীন সময় ডায়রিয়ায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। অল্প সংখ্যক কিছু শিশু গরমকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। চিকিৎসকেরা তাই শীতকালীন সময় ডায়রিয়া কে এড়ানোর জন্য রোটা ভাইরাসের টিকা নেওয়ার উপদেশ দেন। 
আপনার বাচ্চাকে রোটা ভাইরাসের টিকা দেওয়ার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। একজন রেজিস্টার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আপনার শিশুকে রোটা ভাইরাসের টিকা দিতে পারেন।

বাচ্চাদের ডায়রিয়া কতদিন থাকে

বাচ্চাদের ডায়রিয়া তেমন স্থায়ী হয় না। লক্ষণ দেখা দেওয়া ও ডায়রিয়ার শুরু হওয়া মাত্রই এর চিকিৎসা গ্রহণ করলে দ্রুত ডায়রিয়া ভালো হয়। ডায়রিয়া দূর করার জন্য শিশুর বাবা-মার সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে করণীয় সব সময় শিশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। খোলা জায়গায় পায়খানা না করা। 

হাত ভালোভাবে ধুয়ে খাবার গ্রহণ করার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণত ডায়রিয়া হলে ৩-৭ স্থায়ী হয়। কিন্তু এর চাইতে যদি বেশি সময় স্থায়ী হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করানো উচিত।

লেখকের মন্তব্য

বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে করণীয় ও বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে কি খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন। আজকের আর্টিকেলটি তাদের উদ্দেশ্যে লেখা। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন৷ আজকে বাচ্চাদের ডায়রিয়া বিষয়ে সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি। 

আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করুন। নিয়মিত এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটটি ভিজিট করুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

প্রিয় টপিকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url