আয়ুর্বেদিক ঔষধের নাম ও কাজ, এবং আয়ুর্বেদিক ঔষধি গাছের নাম

প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক ঔষধের মাধ্যমে বিভিন্ন চিকিৎসা করে আসছে কবিরাজ বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা। বিভিন্ন রোগের আরোগ্য লাভের জন্য ঔষধ সেবনের পূর্বে আয়ুর্বেদিক ঔষধের ব্যবহার হতো। আয়ুর্বেদিক ঔষধের নাম ও কাজ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটিতে বিভিন্ন বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা করেছি।
আয়ুর্বেদিক ঔষধের নাম ও কাজ, এবং আয়ুর্বেদিক ঔষধি গাছের নাম
যে চিকিৎসা গুলোই চিকিৎসকরা হার মেনে যাই চিকিৎসকরা চিকিৎসা করতে চাই না, বা চিকিৎসা করে কোন ভাল ফলাফল হয় না এমন রোগগুলোতে আয়ুর্বেদিক ঔষধ সেবন করে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

পোস্ট সূচিপত্রঃ আয়ুর্বেদিক ঔষধের নাম ও কাজ, এবং আয়ুর্বেদিক ঔষধি গাছের নাম

.

ভূমিকাঃ 

আয়ুর্বেদিক ঔষধ বলতে সাধারণত প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহারিত হয়ে আসা ঔষধি গাছের, মূল, শিকড়, পাতা, ফুল, ফল, ছাল, রস দিয়ে যে ওষুধগুলো তৈরি করা হয় সে ঔষধ গুলোকে আয়ুর্বেদিক ঔষধ বলে৷ প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক ঔষধ সেবন করে লক্ষাধিক লোক আরোগ্য লাভ করছেন। লাক্ষাধিক লোক সুস্থ হওয়ায় বেড়েছে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার প্রচার এবং প্রসার। 

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় যে ওষুধগুলো ব্যবহৃত হয় সেই ওষুধগুলো সম্পর্কে পুরো আর্টিকেলটিতে আলোচনা করেছি। আয়ুর্বেদিক ঔষধের নাম ও কাজ সম্পর্কে থাকছে আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত। এছাড়া আয়ুর্বেদিক ঔষধ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে হলে পুরো আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।

আয়ুর্বেদিক ঔষধের নাম ও কাজ

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন গাছ, পাতা, লতা, মূল, শিকড় যে চিকিৎসা গুলোতে ব্যবহৃত হয় এবং এই গাছ লতাপাতা মূল শিকড় গুলো কিভাবে খাওয়া যায় খেলে কি হয় চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
  • নিম
  • তুলসী
  • এলোভেরা
  • অর্জুন গাছ
  • আমলকি
  • পুদিনা পাতা
  • মেথি
  • ধনেপাতা
  • আদা
  • শিমুল গাছ
  • হাড়জোড়া
  • শতমূল
আয়ুর্বেদিক ঔষধের নাম ও কাজ, এবং আয়ুর্বেদিক ঔষধি গাছের নাম
নিমঃ নিম আয়ুর্বেদিক ঔষধের মধ্যে অন্যতম একটি গাছ এই গাছের মূল পাতা শিকড় ফল সবকিছুই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ব্যবহৃত হয়, নিম গাছের রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন। নিম পাতা সহ নিম গাছের যে কোন কিছু ঔষধ হিসেবে নিয়মিত সেবন করলে শরীর এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিম পাতার রস নিয়মিত সেবন করলে পেটের কৃমি দূর হয়, শারীরিক দুর্বলতা সহ, বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

তুলসীঃ বহু প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় তুলসী গাছ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তুলসী গাছ ও পাতার রয়েছে হাজারও ঔষধি গুনাগুন। তুলসী পাতার রস তুলসী পাতা বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহারিত হয়। অতিরিক্ত কাশি, বুকে জমে থাকা কফ, কৃমিনাশক, সর্দি, মাথা ব্যথার জন্য তুলসী পাতার রস অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া তুলসী পাতার পেস্ট ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহৃত হয় যা ত্বকের যত্নে অত্যন্ত উপকারী।

এলোভেরাঃ এলোভেরা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় অনেক আগে থেকে ব্যবহৃত হয়। অ্যালোভেরা রয়েছে হাজারো গুনাগুন। মুখের ব্রণ দূর করতে, শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে, যৌন দুর্বলতা দূর করতে, ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে, রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে, নিয়মিত মাথা ঘোরানোর সমস্যা দূর করতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়া এলোভেরার জেল ত্বকে ও চুলে ব্যবহার করা হয়।

অর্জুন গাছঃ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় অর্জুন ফল, ও গাছের ছাল অত্যন্ত উপকারী। শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে, অর্জুন গাছের ছালের রস উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া কাশি দূর করতে, অতিরিক্ত মেদ কমাতে, শরীরের ওজন সঠিক রাখতে অর্জুন ছালের রস অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া যাদের পুরুষত্বে সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত অর্জুন গাছের ছালের রস সেবন করলে এ সমস্যা দূর হয়।
এছাড়া ত্বকের জন্য ও চুলের জন্য অর্জুন গাছের ছাল অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া প্রসাবের জ্বালাপোড়া, শরীরের ব্যথা, হার্টয়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে অর্জুন গাছের ছাল খুবই উপকারী। মহিলাদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব হলে অর্জুন গাছের ছাল ও চুন একত্রে ভিজিয়ে রেখে সকালে পানি ছেকে সেবন করলে এ সমস্যা ভালো হয়।

আমলকিঃ আমলকি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহু আগে থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমলকির বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। আমলকি স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা, শারীরিক দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা, রক্তে কোলেস্ট্রল এর মাত্রা দূর করতে আমলকি অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া অতিরিক্ত বমির চিকিৎসায় ও বমি বমি ভাব দূর করতে, 

আমলকি সেবন করলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, এটা দাঁত, চুল, ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। যাদের খাবার রুচি হয় না তারা নিয়মিত আমলকি খেলে খাবারের রুচি বৃদ্ধি হয়। স্মৃতিশক্তি দুর্বল হলে নিয়মিত আমলকি খেলে দ্রুত স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি হয়।

পুদিনা পাতাঃ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় পুদিনা পাতা অত্যন্ত উপকারী। শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা পেলে ফুলে গেলে পুদিনা পাতা থেঁতো করে লাগিয়ে দিলে সে স্থানের ব্যথা দূর হয়। পেটের অতিরিক্ত ব্যথা মাথার ব্যথা, বাতের ব্যথা, দূর করতে পুদিনা পাতা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় পুদিনা পাতার চা অত্যন্ত উপকারী। শরীরের অতিরিক্ত ওজন দূর করতে, মেদ কমাতে পুদিনা পাতা অত্যন্ত উপকারী।

মেথিঃ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় মেথি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মেথিবীজ ও মেথি বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সহযোগিতা করে। ডায়াবেটিসের সমস্যা দূর করতে, শরীরের এলার্জি দূর করতে, বাতের ব্যথায়, পেট ব্যথায়, গ্যাসের সমস্যা দূর করতে, ডায়রিয়ার সমস্যা দূর করতে, হার্টের সমস্যা দূর করতে, ঋতুস্রাব সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে, পুরুষের শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে, 

যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে, ভুড়ি কমাতে, শরীরের ওজন কমাতে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, হজমের সমস্যা দূর করতে মেথি অত্যন্ত উপকারী। উল্লেখিত সমস্যাগুলো দূর করার জন্য নিয়মিত খালি পেটে মেথিদানা চিবিয়ে খেলে উল্লেখিত সমস্যাগুলো দূর হয়।

ধনেপাতাঃ ধনেপাতা তে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য শক্তি রয়েছে। ধনেপাতাতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ, সি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। নিয়মিত ধনেপাতা খেলে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয়। হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা দূর করতে ধনেপাতা অত্যন্ত উপকারী। খাবারের সাথে নিয়মিত ধনেপাতা খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি হয়।

আদাঃ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ঔষধ হিসেবে আদা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আদাতে রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত আদা সেবন করলে স্টকের ঝুঁকি কমে যায়। আদা চা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ও খুসখুসে কাশি দূর করতে আদা বিশেষভাবে কাজ করে। বদহজম, পেট ফেঁপে যাওয়া, অম্বল, গ্যাস, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব দূর করতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে নিয়মিত আদার রস অথবা আদা খেলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

শিমুল গাছঃ কচি শিমুল গাছের শিকড় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় অনেক আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে শিমুল গাছের শিকড় পুরুষের শারীরিক দুর্বলতা, ও যৌন দুর্বলতা দূর করতে অত্যন্ত উপকারী। গোপ#নাঙ্গের যেকোনো সমস্যা দূর করতে শিমুল গাছের শিকড় সেবন করলে সুস্থতা ফিরে আসে। পুরুষের গোপ#নাঙ্গ মোটা, শক্ত, শিথিলতা দূর করতে, চিকন অথবা মোটা, সময় বৃদ্ধি করতে, আগ্রহ বৃদ্ধি করতে, ঘন করতে, শিমুল গাছের শিকড় অত্যন্ত উপকারী। 

এছাড়া পুরুষের শুক্রাণু বৃদ্ধিতে এই গাছের শিকড়ের রয়েছে বিশেষ গুণ। এছাড়া ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ও খনিজের চাহিদা পূরণ করতে শিমুল গাছের শিকড় অত্যন্ত উপকারী। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে শিমুল গাছের শিকড় মধুর সাথে নিয়মিত চিবিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি হয়।

হাড়জোড়াঃ হাড়জোড়া দীর্ঘদিন ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহারিত হয়ে আসছে। হাড়জোড়ার রয়েছে হাজারো ঔষধি গুনাগুন। শরীরের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেলে, ফেটে গেলে, ব্যথা পেলে, মচকে গেলে, হাড়জোড়া বেটে উক্ত স্থানে লাগিয়ে রাখলে দ্রুত এই সমস্যা দূর হয়। এছাড়া বদহজ, হজমের সমস্যা, পেট ফাঁপা, পেটের ব্যথা দূর করতে হাড়জোড়া গাছ অত্যন্ত উপকারী। 
যাদের নিয়মিত নাক দিয়ে রক্ত পড়ে কোন ওষুধ সেবন করে ভালো হয় না তারা হাড়জোড়া রস নিয়মিত নাকে দিলে নাক দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। হাড়জোড়া গাছ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, ও প্রসাবের যেকোনো সমস্যা দূর করতে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়।

শতমূলঃ শতমূল আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহু প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শতমূলে রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন। বিশেষ করে পুরুষের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে শতমূল অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বিশেষভাবে কাজ করে। শতমূলে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে শরীরের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য, এবং শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে শতমূল অত্যন্ত উপকারী।

লেখকের মন্তব্য

আয়ুর্বেদিক ঔষধের নাম ও কাজ, ও আয়ুর্বেদিক ঔষধ সম্পর্কে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের উদ্দেশ্যে লেখা। আর্টিকেলটিতে আয়ুর্বেদিক ঔষধের নাম ও ওষুধের কাজ সম্পর্কে তুলে ধরেছি। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন গাছ, এবং এই গাছের উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরেছি। এছাড়া হাজারো গাছ রয়েছে যা আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। 

আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন। আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। নিয়মিত এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটটি ভিজিট করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন