জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয়, ওজন বৃদ্ধির উপায়
জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয় হল শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো পাশাপাশি শিশুর মাকে অবশ্যই পুষ্টিকর, প্রোটিন, ও ভিটামিন যুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়া। শিশুর ওজন যদি অতিরিক্ত কম হয় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া। নবজাতক শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটিতে থাকছে বিস্তারিত।
কিছু শিশু জন্মের সময় স্বাভাবিক ওজন নিয়ে জন্মায়। কিছু শিশু জন্মের সময় স্বাভাবিক ওজনের চাইতে বেশি ওজন নিয়ে জন্মায়। কিছু শিশু স্বাভাবিকের চাইতে কম ওজন নিয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করে এক্ষেত্রে একজন মায়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু করণীয় রয়েছে যার মাধ্যমে শিশুর ওজন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
পোস্ট সূচিপত্রঃ জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয় - নবজাতক শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায়
.
ভূমিকা
স্বাভাবিক ওজন নিয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করলে শিশুর সুস্থ থাকে। কিন্তু স্বাভাবিকের চাইতে কম ওজন নিয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করলে শিশুকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন ও রোগবালাই আক্রান্ত করে। স্বাভাবিক ওজনে শিশু জন্মগ্রহণ করলে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। জন্মের সময় শিশুর স্বাভাবিক ওজন ২.৫ কেজি থাকা অত্যন্ত জরুরী। এর চাইতে বেশি হলে সবচাইতে ভালো কিন্তু এর চাইতে কম হলে লো বার্থ ওয়েট ধরে নেওয়া হয়। শিশুর লো বার্থ ওয়েটকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে এর মধ্যে:
- লো বার্থ ওয়েট (LBW)
- ভেরি লো বার্থ ওয়েট (VLBW)
- এক্সট্রা লো বার্থ ওয়েট (ELBW)
লো বার্থ ওয়েট (LBW): এ পর্যায়ের শিশুরা জন্মগ্রহণ করার পরে ২.৫ কেজির চাইতে কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ১.৫- ২.৪ কেজি ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুকে লো বার্থ ওয়েট হিসেবে ধরা হয়।
ভেরি লো বার্থ ওয়েট (VLBW): ৮০০- ১.৪ কেজি ওজনের জন্ম নেওয়া শিশুকে ভেরি লো বার্থ ওয়েট বলে। এ ধরনের শিশুরা অত্যন্ত দুর্বল হয়।
এক্সট্রা লো বার্থ ওয়েট (ELBW): এ পর্যায়ের শিশুরা ৬০০- ৭৫০ গ্রাম ওজনের চাইতে কম হয়। এ পর্যায়ে শিশুদের জন্মের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাখতে হয়। এরকম ওজনের শিশুদের জন্মের পর অধিক দুর্বল বলে ধরে নেয়া হয়। এ পর্যায়ে শিশুদের বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।
জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয়, সদ্য নবজাতক শিশু জন্মের পর শিশুর ওজন দ্রুত বৃদ্ধি করবেন কিভাবে। শিশুর জন্মের পর ওজন কম হলে দ্রুত কিভাবে শিশুকে সবল ও সুস্থ করা যায় এছাড়া শিশুর ওজন বৃদ্ধি, শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধি, শিশুকে মোটা করতে বিভিন্ন টিপস থাকছে আজকের আর্টিকেলটিতে। তাই বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
শিশুর ওজন কম হলে করনীয়
শিশুর ওজন কম হলে অথবা শিশুর ওজন অতিরিক্ত কম হলে সে ক্ষেত্রে আপনার কিছু করণীয় রয়েছে। শিশুর ওজন অতিরিক্ত কম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখুন। নিয়মিত পরিচর্যা করুন, কোনভাবেই পরিচর্যাতে ঘাটতি রাখবেন না। শিশুকে দ্রুত সুস্থ করার জন্য অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
বুকের দুধের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য খাবার নাকে নল দেওয়ার মাধ্যমে খাওয়ান। যদি আপনার শিশু অল্প পরিমাণ ওজন কম হয় সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখার প্রয়োজন নেই। শিশুর ওজন ২-২.৪ কেজি হলে আপনার শিশুকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে না। এমন অবস্থায় আপনার শিশুকে শিশুর চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ খাওয়ান।
পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ড্রপার এর মাধ্যমে কোন ভিটামিন খাওয়াতে পারেন। শিশুর মাকে বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। ভিটামিন ও প্রোটিনযুক্ত খাবার, বেশি বেশি গ্রহণ করলে বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে পুষ্টি যোগাবে। এতে আপনার শিশুর দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পাবে।
জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয়
জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে অবশ্যই একজন মায়ের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। কেননা এমন সময় আপনি সচেতন না হলে আপনার শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। সদ্য জন্মগ্রহণকারী শিশুর ওজন সম্পর্কে তিনটি পর্যায় রয়েছে। শিশুর ওজনকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে এর মধ্যে:
- লো বার্থ ওয়েট (LBW) ২.৫ কেজির কম
- ভেরি লো বার্থ ওয়েট (VLBW) ১.৫ কেজির কম
- এক্সট্রা লো বার্থ ওয়েট (ELBW) ৮০০ গ্রামের কম
আপনার শিশু যদি লো বার্থ ওয়েটে জন্মগ্রহণ করে সে ক্ষেত্রে চিন্তার কিছু নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ খাওয়ালে দ্রুত শিশু সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে। অন্যদিকে ভেরি লো বার্থ ওয়েটে শিশু জন্মগ্রহণ করলে। শিশুর মাকে শিশুর প্রতি বেশি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। এমন সময় শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন বা অন্য কোন ফিডিং জাতীয় খাবার খাওয়াতে পারেন তাহলে শিশু দ্রুত সুস্থ হবে।
এছাড়া শিশু যদি এক্সট্রা লো বার্থ ওয়েটে জন্মগ্রহণ করে সেক্ষেত্রে অনেক চিন্তার বিষয়। এমন অবস্থায় শিশুর জন্মগ্রহণ করলে বাঁচার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাখলে শিশুকে সুস্থ করা সম্ভব। এই পর্যায়ের শিশুরা শারীরিক দিক থেকে অত্যন্ত দুর্বল হয়। খাবার পর্যন্ত ঠিকভাবে খেতে পারে না।
সঠিকভাবে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে হজম করতে পারে না বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এ পর্যায়ে শিশুদের অবশ্যই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখুন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফিডিং ও নলের মাধ্যমে অন্যান্য খাবার খাওয়াতে পারেন দ্রুত শিশু সুস্থ হবে। আশা করি জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন।
নবজাতক শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায়
আপনার নবজাতক শিশুর ওজন বৃদ্ধির জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয় হল শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য কিছু ফিডিং হিসেবে খাওয়ান। যদি বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য কিছু না খাওয়ান সেক্ষেত্রে শিশুর মাকে ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেল, পুষ্টি, শর্করা আমিষ, যুক্ত খাবার গুলো বেশি বেশি গ্রহণ করতে হবে।
যেহেতু শিশু বুকের দুধ খায় তাই বুকের দুধের মাধ্যমে এই পুষ্টিগুলো শিশুর শরীরের দ্রুত ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। শিশুর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথেই অন্যান্য খাবার খাওয়াতে থাকুন শিশুর গ্রোথ বৃদ্ধি পাবে।
শিশুর ওজন ও বৃদ্ধির চার্ট
সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুর বেড়ে ওঠার সাথে সাথে ওজনের সামঞ্জস্য রয়েছে। শিশু সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে কিনা তার শারীরিক ওজন ঠিক আছে কিনা আপনি কিছু সহজ উপায়ে তা বুঝতে পারবেন। একটি শিশুর নির্দিষ্ট বয়স অনুযায়ী শরীরের কিছু নির্দিষ্ট ওজন লক্ষ্য করা যায়। সেক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা আলাদা হতে পারে।
মাস অনুযায়ী শিশুর ওজন ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের কম বা বেশি হয়। এটা নির্ভর করে সন্তানের বাবা মার ওপর। সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুর বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন ও বৃদ্ধির চার্ট এর তালিকা দেওয়া হলঃ
- প্রথম মাস ছেলেশিশু ৩.৫ কেজি মেয়েশিশু ৩.৪ কেজি
- দ্বিতীয় মাস ছেলেশিশু ৫.৬ কেজি মেয়েশিশু ৪.২ কেজি
- তৃতীয় মাস ছেলেশিশু ৬.৪ কেজি মেয়েশিশু ৫.৮ কেজি
- চতুর্থ মাস ছেলেশিশু ৭ কেজি মেয়েশিশু ৬.৪ কেজি
- পঞ্চম মাস ছেলেশিশু ৭.৫ কেজি মেয়েশিশু ৬.৯ কেজি
- ষষ্ঠ মাস ছেলেশিশু ৭.৮ কেজি মেয়েশিশু ৭.২ কেজি
শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি হওয়ার ছয় মাসের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। একটি সুস্থ শিশু প্রতিমাসে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম বৃদ্ধি পায়। তবে বাবা মার শারীরিক উচ্চতা ও শিশুর বয়স অনুযায়ী এই ওজন কম অথবা বেশি হতে পারে। উপরে শিশুর বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন ও বৃদ্ধির চার্ট দেওয়া হয়েছে।
শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায়
শিশুর ওজন বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই শিশুকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে খাবারের পরিমাণও বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ করে প্রোটিন ও ভিটামিন যুক্ত খাবার পর্যায়ক্রমে শিশুকে খাওয়াতে হবে। জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয় হলো শিশুকে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো। দুগ্ধজাত খাবার, দুধ, ঘি, পনির, মাখন, পুডিং, পায়েস, বেশি বেশি খাওয়াতে হবে।
এছাড়া শিশুকে নিয়মিত শর্করা জাতীয় খাবার ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, আলু, ভাত, রুটি, সিমের বিচি, বাদাম, কোকোনাট অয়েল, অলিভ অয়েল, ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার, ডিম, বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। অবশ্যই বাজারের প্যাকেটজাত খাবার, কেক, বিস্কুট, পাউরুটি, চিপস, বিভিন্ন কোমল পানীয় কখনোই খাওয়াবেন না এগুলো স্বাস্থ্যের পাশাপাশি কৃমির সমস্যা বৃদ্ধি করে। শিশুর ওজন বৃদ্ধির জন্য শিশুর ওজন ও বৃদ্ধির চার্ট দেখে বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান।
বাচ্চা কি খেলে মোটা হয়?
শিশুর ওজন বৃদ্ধির জন্য শিশুকে অবশ্যই ভিটামিন, শর্করা, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, যুক্ত খাবার খাওয়ান। অবশ্যই ডিম দুধ, বিভিন্ন সবজি, টাটকা ফলমূল, খাওয়ান৷ বেশি বেশি দুগ্ধজাত খাবার, দুধ, মাখন খাওয়ান। এই খাবারগুলো বেশি বেশি শিশুকে খাওয়ালে দ্রুত শিশুর ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি মেধা, ও শরীরের বিকাশ ঘটবে।
মা কি খেলে বাচ্চা মোটা হয়?
বাচ্চা যদি বুকের দুধ খায় সেক্ষেত্রে মা যে খাবারগুলো গ্রহণ করবে সেই খাবারগুলোর পুষ্টি ও ভিটামিন শিশুর শরীরে বুকের দুধের মাধ্যমে প্রবেশ করবে। তাই মা বেশি বেশি ভিটামিন জাতীয় খাবার খেলে শিশুর শরীর স্বাস্থ্য ভালো হয় শিশু মোটা হয়। শিশুকে মোটা করার জন্য অবশ্যই মা কে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
এছাড়া গর্ভাবস্থায় যদি শিশুকে মোটা করতে চান অথবা স্বাস্থ্যবান করতে চান সে ক্ষেত্রেও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। শিশুর জন্ম গ্রহণের পর শিশুকে মোটা করতে চাইলে বেশি বেশি দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, কলিজা, খেতে পারেন। অবশ্যই সবুজ শাকসবজি, টাটকা ফলমূল বেশি বেশি খান। এছাড়া প্যাকেট জাত উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে পারেন এতে দ্রুত শিশু মোটা হবে।
লেখক এর মন্তব্য
জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয় ও নবজাতক শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি। যারা শিশুর ওজন বৃদ্ধির জন্য চিন্তিত রয়েছেন। কম ওজনে কি করবেন সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করুন।
নিয়মিত এরকম আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটটি ভিজিট করুন। আপনার আরো অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের ক্যাটাগরি গুলো ঘুরে আসুন। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।