অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয়, ঘরোয়া উপায়, ঔষধ, চিকিৎসা, প্রতিকার

অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয় হল কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা। ঔষধের পাশাপাশি ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে বাচ্চাদের পাশাপাশি বড়দেরও অতিরিক্ত কৃমি দূর করা যায়। বাচ্চাদের অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয় সম্পর্কে থাকছে আজকের আর্টিকেলটিতে।
অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয় - বাচ্চাদের অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয়
কৃমির সমস্যায় ছোট বড় সকলে ভুগেন কৃমির জন্য পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনা যে এই সমস্যা গুলো কৃমির জন্য হচ্ছে। একজন ব্যক্তির পেটে কৃমি আক্রমণ করলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।

পোস্ট সূচিপত্রঃ অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয় - বাচ্চাদের অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয়

.

ভূমিকাঃ

কৃমির সমস্যা আমরা চোখ দিয়ে দেখতে পাই না বিধায় এটি রোগ হিসেবে মানতে নারাজ। কিন্তু আসলে কৃমির সমস্যা ও মারাত্মক ধরনের সমস্যা। ছোট বড় সকলেই এই সমস্যায় ভুগেন। কৃমি পেটের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কৃমি বেশি লক্ষ্য করা যায়। সময় ও নিয়ম মেনে ওষুধ খাওয়ার পরেও অল্প কিছুদিন পরেই কৃমির উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। 

ঔষধের পাশাপাশি যে ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করলে কৃমির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন আজকের আর্টিকেলটিতে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয় এবং বাচ্চাদের অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয়, ও কৃমি সম্পর্কে যাবতীয় বিস্তারিত তথ্য জানতে আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

বাচ্চাদের কৃমি হওয়ার লক্ষণ

বাচ্চাদের কিছু আচরণ দেখলেই বোঝা যায় যে কৃমির সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃমির সমস্যা বৃদ্ধি পেলে বাচ্চাদের শরীর-স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে যায়। বাচ্চাদের পেটে কৃমির আক্রমণ বেশি হলে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তার মধ্যে হল বাচ্চার পায়ুপথে চুলকানি বৃদ্ধি পায়। বাচ্চা ঘনঘন পায়ুপথ চুলকানোর চেষ্টা করে।
পায়ুপথের আশেপাশে অতিরিক্ত লাল হয়ে থাকে এবং চুলকানির মতো ছোট ছোট ফুসকুড়ি থাকে। হঠাৎ ডায়রিয়া পাতলা পায়খানা বা আমাশয় হয়। পেট ফেপে যায় নিয়মিত পেট ব্যথা হয় খাবার হজমের সমস্যা হয়। শিশুকে পুষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়ানোর পরও শিশুর তেমন কোন স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় না। 

খাবারে অরুচি দেখা দেয় যেকোনো সময় বমি বমি ভাব হয় বমি হয়েও যেতে পারে। পেটে ফিতা কৃমি আক্রমণ করলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। ছোট বাচ্চাদের কৃমি আক্রমণ করলে পায়ুপথ দিয়ে অথবা পেশাবের সাথে কৃমি বেরিয়ে আসতে পারে।

অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয়

কৃমির আক্রমণ বেশি হলে কিছু নিয়ম অবলম্বন করলে খুব সহজেই পেটের কৃমি দূর করা সম্ভব। নিয়মিত পুষ্টি যুক্ত খাবার খাওয়ার পরেও কৃমির জন্য শরীর ও স্বাস্থ্যের তেমন উন্নতি হয় না। পেটে কৃমি বেশি হলে পেট ব্যথার মত সমস্যা, পাতলা পায়খানা, ডায়রিয়া, বদ-হজমসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত ক্রিমি হলে করণীয় হলঃ

পরিছন্নতাঃ নিয়মিত খাবার খাওয়ার পূর্বে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করা। হাতের নখ বড় হলে কেটে ছোট করা।

নিম পাতাঃ নিম পাতা অথবা নিম গাছের ছাল অথবা নিমের রস নিয়মিত সকালে খালি পেটে খেলে কৃমির সমস্যা দূর হয়।

কাঁচা হলুদঃ এক কাপ গরম পানির সাথে ১ চা চামচ কাঁচা হলুদ মিশিয়ে নিন এরপর এই পানি পান করুন সহজে কৃমি দূর হবে।

লবঙ্গঃ কৃমির প্রাদুরর্ভাব বেশি হলে নিয়মিত চার থেকে পাঁচটি  লবঙ্গ খেতে পারেন।

কুমড়ো বীজঃ মিষ্টি কুমড়োর বীজ গরম জলে ভালোভাবে সিদ্ধ করে কয়েকদিন সকালে খালি পেটে খান। দ্রুত কৃমি সেরে যাবে।

কালো জিরাঃ হাদিসে বর্ণিত আছে কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ। নিয়মিত সকালে খালি পেটে কালোজিরা চিবিয়ে খেলে কৃমি সমস্যা দূর হয়।
করলাঃ নিয়মিত আপনার খাবারের সাথে সবজি হিসেবে করলা খেতে পারেন এতে কৃমির আক্রমণ থেকে সহজে মুক্তি পাবেন।

করলা জুসঃ নিয়মিত সকালে খালি পেটে করলা জুস খেলে খুব সহজে কৃমি দূর করা যায়।

মেথি শাকঃ অতিরিক্ত কৃমির আক্রমণ বেশি হলে খাবারের সাথে সবজি হিসেবে মেথি শাক যোগ করুন। কৃমি সমস্যা দূর হবে।

উপরের এই উপায় গুলো অবলম্বন করলে খুব সহজে কৃমি সমস্যা দূর করতে পারবেন। আশা করি অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয় কি সে বিষয়ে সঠিক ধারণা পেয়েছেন।

বাচ্চাদের অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয়

অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয় - বাচ্চাদের অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয়
নিয়মিত বাচ্চাদের কৃমির মত সমস্যা লেগেই থাকে। কৃমির কারণে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বাচ্চাদের অতিরিক্ত ক্রিমি হলে যে খাবারগুলো ঘরোয়াভাবে খাওয়াবেন তাহলোঃ
  • নিম পাতার রস
  • কাঁচা হলুদ
  • কুমড়ো বীজ
  • লবঙ্গ
  • কালো জিরা
  • করলা জুস
  • মেথি দানা বা মেথি শাক
  • ক্যারম বীজ
  • কাঁচা পেঁপে
  • রসুন
উল্লেখিত খাবারগুলো শিশুকে খাওয়ানোর পর কৃমির আক্রমণ দূর না হলে ঔষধ খাওয়ানো যেতে পারে। ওষুধ খাওয়ানোর জন্য শিশুর বয়স অবশ্যই এক বছরের ঊর্ধ্বে হতে হবে।

কৃমির ট্যাবলেট এর নাম কি

বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির কৃমির ট্যাবলেট পাওয়া যায় যা কৃমি নাশক হিসেবে কাজ করে। ঘরোয়া টোটকার পাশাপাশি ক্রিম নাশক হিসেবে ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করলে দ্রুত কৃমি দূর হয়। বাজারে বিভিন্ন নামের কৃমির ঔষধ পাওয়া যায় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ
  • Albendazole 400mg
  • Almex 400mg
  • Alben 400mg
  • Vermicid SMC
  • Bendex 400mg
উল্লেখিত ঔষধ গুলো কৃমিনাশক হিসেবে বাজারে পাওয়া যায়। এই ওষুধগুলো কৃমিনাশক হিসেবে ভালো কাজ করে। ভালো ফলাফল পেতে খালি পেটে কৃমিরের ঔষধ সেবন করুন।

বাচ্চাদের কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম

বাচ্চাদের কৃমির সমস্যা অতিরিক্ত বেশি হলে সে ক্ষেত্রে কৃমির ওষুধ সেবন করানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বাচ্চার বয়স অবশ্যই এক বছরের ঊর্ধ্বে হতে হবে। বাচ্চাকে ৪-৬ মাস পরপর কৃমির ঔষধ সেবন করানো যায়। শিশুর বয়স এক বছরের ঊর্ধ্বে হলে Albendazole, Mebendazole ঔষধ সেবন করানো যায়। ভরা পেটে কৃমির ওষুধ সেবন করানো যেতে পারে। তবে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য শিশুকে খালি পেটে কৃমির ঔষধ সেবন করান।

বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ

বাচ্চাদের কৃমিনাশকের জন্য বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ পাওয়া যায়। তবে সব ওষুধ সেবন করে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। বাচ্চাদের কৃমি নাশক হিসেবে অনেক দিন যাবত যে ওষুধগুলো ব্যবহারিত হয়ে আসছে তাহলো:
  • Albendazole
  • Mebendazole
  • Almex
  • Solas
  • Melphin
  • Alben
উল্লেখিত এই ওষুধগুলো শিশুদের কৃমি নাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

কৃমির ঔষধ কতদিন পর পর খেতে হয়

অনেকে কৃমির সমস্যায় ভুগছেন। কৃমির সমস্যা থেকে পেটের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। নিয়মিত সময় অনুযায়ী ক্রিমির ঔষধ সেবন করলে কৃমির সমস্যা থেকে সুস্থ থাকা সম্ভব। কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম সর্বোচ্চ তিন মাস পর পর। একবার কৃমির ঔষধ সেবন করলে সাত দিন পর পুনরায় একই ডোজ সেবন করা যায়। ঔষধ সেবন করে কৃমি নষ্ট করলে পুনরায় সাত দিনের মধ্যে কৃমির ডিম থেকে লার্ভা জন্ম নেই। সে ক্ষেত্রে সাত দিন পর কৃমির ঔষধ সেবন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

কৃমির ট্যাবলেট কখন খেতে হয়

কৃমির ঔষধ সব চাইতে খালি পেটে খাওয়া ভালো। ভরা পেটেও কৃমির ওষুধ সেবন করা যায়। অতিরিক্ত কৃমির সমস্যা হলে Albendazole একটি ট্যাবলেট খালি পেটে সেবন করুন। পুনরায় সাত দিন পর আবারো একটি ট্যাবলেট সেবন করুন। আশা করি কৃমির সমস্যা দূর হবে।

পেটে কৃমি হলে কি কি সমস্যা হয়

অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয় ও পেটে কৃমি হলে কি কি সমস্যা হয় তা হল: পেটে অতিরিক্ত কৃমি হলে পেট ব্যথা, বদহজম, পেট ফাঁপা, পাতলা পায়খানা, খাবারে অরুচি, মলদ্বারে চুলকানি, পুষ্টিহীনতা, রক্তশূন্যতা, বমি বমি ভাব, স্বাস্থ্যের অবনতি দেখা দেয়। উল্লেখিত এই একাধিক সমস্যাগুলো কোন ব্যক্তির মধ্যে দেখা গেলে কৃমির আক্রমণ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

কৃমির ট্যাবলেট কি খালি পেটে খেতে হয়

ক্রিমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে সকালে অথবা খালি পেটে। তবে কৃমির ঔষধ ভরা পেটেও সেবন করা যায়। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য ঠান্ডা আবহাওয়া খালি পেটে কৃমির ওষুধ সেবন করুন।

লেখকের মন্তব্য

অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয় ও বাচ্চাদের অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয় এ সম্পর্কিত অনেকে প্রশ্ন করেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের উদ্দেশ্যে লেখা আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন। কৃমি সম্পর্কিত আপনার আরো অন্য কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এই রকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাইটের ক্যাটাগরি গুলো ঘুরে আসুন। নিয়মিত এ রকম আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটটি ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

প্রিয় টপিকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url