গর্ভাবস্থায় বেশি ক্ষুধা লাগার কারণ করণীয় ও বর্জনীয়
গর্ভাবস্থায় বেশি ক্ষুধা লাগার কারণ কি আপনি যদি গর্ভাবস্থায় বেশি মোবাইল ব্যবহার করেন সে ক্ষেত্রে কোন ক্ষতির আশঙ্কা থাকে কিনা বিস্তারিত থাকছে আজকের আর্টিকেলটিতে।
একটি সন্তান জন্ম দেয়া কতটা সৌভাগ্যের ব্যাপার সেটা একজন মা জানে। প্রত্যেকটি মেয়ে মা হওয়ার সাধ উপভোগ করতে চাই। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের কিছু নিয়ম, কানুন রয়েছে যা মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিয়ম গুলো এড়িয়ে চললে বা অবহেলা করলে গর্ভাবস্থায় আপনার সন্তানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনায় বেশি থাকে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় বেশি ক্ষুধা লাগার কারণ - গর্ভাবস্থায় বেশি মোবাইল ব্যবহার
.
ভূমিকাঃ
অনেকে মহিলা গর্ভাবস্থায় জানেন না যে কোন নিয়মগুলো মেনে চলতে হয়। ও কোন নিয়মগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। গর্ভাবস্থায় কোন খাবারগুলো খেতে হয়। কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। গর্ভাবস্থায় এমন কিছু খাবার রয়েছে যা আপনার সন্তানের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অন্যদিকে গর্ভাবস্থায় এমন কিছু খাবার ও অভ্যাস রয়েছে যা আপনার সন্তানের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
যে বিষয়গুলো আপনার গর্ভের সন্তানের জন্য উপকারী সে বিষয়গুলো অবশ্যই মেনে চলা উচিত। বিজ্ঞান এবং বাস্তব প্রমাণ অনুযায়ী "আপনি গর্ভাবস্থায় যে আচরণগুলো বেশি বেশি করবেন সেই বিষয়গুলো আপনার সন্তান জন্মের পরে অনুকরণ করবে" তাই একজন ব্যক্তির উচিত গর্ভাবস্থায় বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলা। একজন মহিলার গর্ভাবস্থায় করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয় সম্পর্কে জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
গর্ভাবস্থায় বেশি বমি হলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় একাধিক সমস্যার কারণে বমি হয় সেক্ষেত্রে একজন গর্ভবতী মহিলার করণীয় হলো আপনার যদি খাবার খাওয়ার সময় অতিরিক্ত বমি হয় সে ক্ষেত্রে আপনি অল্প অল্প করে দিনের প্রত্যেকটি অংশে খাবার খাবেন। আপনার যে খাবারটি খেতে ইচ্ছে করবে আপনি দিনের যে কোন অংশে এ খাবারগুলো অল্প অল্প করে গ্রহণ করুন।
কখনোই আপনার রুচি হচ্ছে না এরকম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন না সে ক্ষেত্রে আপনার বমির মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। গর্ভাবস্থায় হঠাৎ করে যে কোন সময় বমি হলে আপনার বাম অথবা ডান হাতের কব্জির কাছে যে কোন শিরা চেপে ধরুন এদের দ্রুত বমি বন্ধ হবে।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ হলো হঠাৎ বমি হলে আপনার নাভি দুই আঙ্গুল দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরুন আপনার বমি দ্রুত বন্ধ হবে। তৃতীয় পদক্ষেপ হঠাৎ করে বমি হলে আপনার কাছে যে পছন্দনীয় শুঘ্রাণ রয়েছে সেটি নেওয়ার চেষ্টা করুন এতে দ্রুত বমি বন্ধ হবে।
গর্ভাবস্থায় বেশি ক্ষুধা লাগার কারণ
গর্ভাবস্থায় অনেকে মহিলার ঘনঘন ক্ষুধা লাগে অনেকের এ বিষয়ে সঠিক ধারণা নেই। আপনি গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস স্বাভাবিক এর চাইতে একটু বেশি পরিমাণে ক্ষুধা অনুভব করবেন। কিন্তু তিন মাস পর হতে আপনার অতিরিক্ত মাত্রায় ক্ষুধা বৃদ্ধি পাবে। কেন তাহলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় সে সম্পর্কে,
বিশেষজ্ঞ এবং ডাক্তাররা বলেন: গর্ভাবস্থায় বেশি ক্ষুধা লাগার কারণ হলো আপনার গর্ভের সন্তান আপনার শরীর থেকে প্রোটিন এবং পুষ্টি গ্রহণ করে সে ক্ষেত্রে আপনি প্রয়োজনের তুলনায় কম প্রোটিন যুক্ত খাবার খেলে আপনার খুব বেশি ক্ষুধা লাগে। গর্ভের সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের বৃদ্ধি হয় সেক্ষেত্রে আপনার ক্ষুধার মাত্রাও বেশি হবে।
গর্ভাবস্থায় হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় দ্রুত খাবার হজম হয় প্রোটিন ও পুষ্টিগুলো শিশু গ্রহণ করে সেক্ষেত্রে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থায় রক্তের শর্করা কমে যায় এজন্য এইমাত্র ঠিক রাখার জন্য শরীর ক্ষুধার সম্মুখীন হয়। আশা করি গর্ভাবস্থায় বেশি ক্ষুধা লাগার কারণ সমূহ সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
গর্ভাবস্থায় বেশি মোবাইল ব্যবহার
অনেক মহিলারা গর্ভাবস্থায় কোন কাজকর্ম থাকে না তখন দীর্ঘক্ষণ যাবৎ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। সারাদিন সময় কাটানোর জন্য মোবাইল ঘাটাঘাটি করেন। গর্ভাবস্থায় বেশি মোবাইল ব্যবহার করলে আপনার সন্তানের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
এ বিষয়ে ইতালির একজন চিকিৎসক বলেছেন: মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন, ফিকোয়েন্সি, শক্তির তরঙ্গ, এস এ আর আপনার গর্ভের সন্তানের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। তবে দিনের যে কোন অংশে অল্প পরিমাণ ফোন ব্যবহার করলে এ সমস্যার সম্মুখীন হবেন না। তবে দীর্ঘক্ষণ যদি গর্ভাবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।
মোবাইল ফোন ব্যবহারে আপনার স্মৃতিশক্তির উপর অধিক চাপ পড়ে এর ফলে আপনার গর্ভের সন্তানের স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো সমস্যা হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় মোবাইল ফোন বেশি ব্যবহার থেকে এড়িয়ে চলুন।
গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়
অনেক মহিলা গর্ভাবস্থায় সব সময় শুয়ে থাকেন। গর্ভাবস্থায় শরীর অত্যন্ত ভারী হয়ে যায় রাতে ঘুম ভালো হয় না এজন্য দিনের অধিকাংশ সময় গর্ভবতী মায়েরা ঘুমাতে পছন্দ করেন। গর্ভবতী মায়ের দিনে সর্বোচ্চ ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হয়।
অস্ট্রেলিয়ান একজন চিকিৎসকের মতে: দিনের অধিকাংশ সময় ঘুমালে বা দিনে ও রাতে বেশি শুয়ে থাকলে মৃত সন্তান প্রসব করা সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় চিত হয়ে শুয়ে থাকলে মৃত সন্তান জন্ম দেয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। গর্ভাবস্থায় কাত হয়ে বেশি শুয়ে থাকলে সন্তানের শারীরিক অঙ্গগুলো বাঁকা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়।
গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে সন্তান প্রসবের সময় অধিক কষ্ট হয়। তাই একজন গর্ভবতী মহিলার প্রয়োজনের তুলনায় অধিক বেশি ঘুমানো উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয়
গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমানোর থেকে দূরে থাকা উচিত। একজন গর্ভবতী মহিলা সর্বোচ্চ ৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন এর বেশি ঘুমালে সন্তানের জন্য ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে শরীর অত্যাধিক বেশি ক্লান্ত হলে শুয়ে থাকা উচিত কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর অবশ্যই হাঁটাহাঁটি করবেন। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণের চাইতে কখনোই বেশি ঘুমাবেন না।
গর্ভাবস্থায় বেশি ঝাল খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস খাবারের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় ফলে গর্ভাবস্থায় বেশি ক্ষুধা লাগার কারণ লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে প্রেগনেন্সির মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ায় খাবার হজম হাওয়া কমে যায় মনে হয় খাবার গলার কাছে এসে আছে। এমন অবস্থায় বেশি ঝাল খেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন গ্যাস্ট্রিক, আমাশয়, ডায়রিয়া।
তবে চিকিৎসকদের মতে গর্ভাবস্থায় শুকনো ঝাল বেশি না খাওয়াই ভালো। তবে যদি ঝাল খেতেই হয় সেক্ষেত্রে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় কাঁচা ঝাল যোগ করতে পারেন। তবে ঝাল অবশ্যই নিয়মের মধ্যে খাওয়া উচিত নয়তো বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় বেশি টক খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় বেশি টক খেলে কোন সমস্যা হয় না যেকোনো ধরনের টক জাতীয় খাবারে ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেশি থাকে সে ক্ষেত্রে আপনার উপকার হবে। গর্ভবতী মহিলাদের বমির ভাব হয় এমন সময় টক খেলে বমি হওয়া দূর হয়। এছাড়া গর্ভবতী অবস্থায় শরীরে সোডিয়াম ও ভিটামিন সি এর চাহিদা বৃদ্ধি পায় এমন অবস্থায় টক খেতে ইচ্ছে করে। গর্ভাবস্থায় টক খাওয়ার স্বাস্থ্যের পক্ষে বাচ্চার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। তবে যে কোন খাবারই বেশি খাওয়া উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় বেশি বসে থাকলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে ও বসে থাকা উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে সন্তানের পক্ষে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে গর্ভাবস্থায় বেশি বসে থাকলে সন্তান নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। অতিরিক্ত বসে থাকলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় বেশি বসে থাকলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় বসে থাকার পাশাপাশি হাঁটাহাঁটি করা প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থায় কি কি বেশি খেতে হয়?
আমেরিকান একদল গবেষক এর মতে: গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত এতে সন্তানের সুস্বাস্থ্য ও গর্ভের সন্তানকে সুস্থ রাখা যায়। গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ভিটামিন জাতীয় খাবার বিভিন্ন সবজি জাতীয় খাবার বিভিন্ন প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি বেশি খান। এতে আপনার গর্ভের সন্তান সুস্থ ও নীরোগ হবে। গর্ভাবস্থায় যে খাবারগুলো বেশি বেশি খাবেন তার একটি তালিকা দেওয়া হল:
- ডিম, দুধ, ঘি
- মাছ, মাংস, ডাল,
- পেয়ারা, কলা, আপেল
- খেজুর, কিসমিস, ডালিম
- আখ, তরমুজ, পেঁপে
- বরই, তেতুল, কমলালেবু
- বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজি
গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি বাচ্চার মাথা বড় হয়
অনেকে জিজ্ঞাসা করেন গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে বাচ্চার মাথা কি বড় হয়। আসলে এই কথার কোন ভিত্তি নেই গর্ভাবস্থায় শুয়ে থাকলে বাচ্চার মাথা বড় হয় না। বাচ্চার মাথা বড় হওয়ার পিছনে অন্যান্য কারণ থাকতে পারে এটা বংশগত হতে পারে। তবে আপনি যদি বেশি শুয়ে বসে থাকেন তাহলে আপনার বাচ্চার মাথা বড় বা ছোট হওয়ার কোন কারণ বর্তায় না। গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে ও বেশি ঘুমালে মৃত সন্তান প্রসব করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে ও বসে থাকা এড়িয়ে চলুন।
লেখক এর মন্তব্য
অনেক গর্ভবতী মায়েরা বিভিন্ন প্রশ্ন করেন অনেকে গর্ভাবস্থায় বেশি ক্ষুধা লাগার কারণ ও গর্ভাবস্থায় বেশি মোবাইল ব্যবহার করলে কি ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে জানতে চান। আজকের আর্টিকেলটিতে গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন,
গর্ভাবস্থায় আরো বিভিন্ন সমস্যা বিষয় যদি আপনার জানার থাকে তাহলে আমাদের কমেন্টে জানাতে পারেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। নিয়মিত এ রকম আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটটি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ