শিশুদের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা অপকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, দুধ খাওয়ার নিয়ম

গরুর দুধ অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাবার শিশুদের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা প্রচুর। বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি জেনে সঠিকভাবে দুধ খাওয়ালে বাচ্চাদেরকে সুস্থ ও রোগ মুক্ত রাখা সম্ভব।
শিশুদের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি
দুধ অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার। শিশু থেকে বয়স্ক প্রত্যেকটি বয়সের লোকের ক্ষেত্রেই শরীরের বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের জন্য গরুর দুধ অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য গরুর দুধ অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ  শিশুদের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা অপকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, দুধ খাওয়ার নিয়ম

.

ভূমিকাঃ

গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শিশু থেকে বয়স্ক পর্যন্ত প্রত্যেকটি ব্যক্তির ক্ষেত্রেই অনেক উপকারী। দুধ সুষম খাবারের মধ্যে অন্যতম। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে দুধ মূল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে দেশী গরুর দুধে সবচাইতে বেশি পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে। 
দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, খনিজ, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, জিংক, কোবাল্ট ও অন্যান্য ভিটামিন উপাদান রয়েছে। দুধের উপকারিতা সম্পর্কে প্রত্যেকটি বিষয়, শিশুদের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা ও বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা

সুস্বাস্থ্যের জন্য এবং শরীরের সকল ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের জন্য গরুর দুধের প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা রয়েছে। শিশুদের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা প্রচুর বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি জেনে দুধ খাওয়ানো উচিত। গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
গরুর দুধের উপকারিতাঃ গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য ভিটামিন রয়েছে যা মানব শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণে ল্যাকটোজ রয়েছে যা আমাদের মন এবং স্বাস্থ্যকে প্রফুল্ল রাখে।
  • নিয়মিত দুধ খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।
  • নিয়মিত দুধ খেলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে এবং বুদ্ধির বিকাশ ঘটে।
  • ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দুধ হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে দুধে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন হাড় ও দাঁত গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
গরুর দুধের অপকারিতাঃ গরুর দুধ অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাবার। গরুর দুধের তেমন অপকারিতা নেই।
  • যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তারা গরুর দুধ খেলে এলার্জির বৃদ্ধি হওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়।
  • যাদের হজম শক্তি দুর্বল তারা দুধ খেলে পেটে এসিডিটির পরিমাণ বেড়ে যায়।
  • যাদের আলসারের সমস্যা রয়েছে এরা দুধ খেলে ডায়রিয়া হওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়।
  • তবে সঠিক নিয়ম মেনে দুধ খেলে এরকম সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব। আশা করি গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন।

শিশুদের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা

শিশুদের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা প্রচুর শিশুকে সুস্থ রাখতে এবং শিশুর সঠিকভাবে মেধা বিকাশের জন্য গরুর দুধ অত্যন্ত কার্যকরী। বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি জেনে দুধ খাওয়ালে বাচ্চাকে সকল প্রকার সমস্যা থেকে সুস্থ রাখা সম্ভব। গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা শিশুর হাড় এবং দাঁত গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 
শিশুদের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি
গরুর দুধের ল্যাকটোজ শিশুদের মেধাবিকাশ এবং হ্যাপি হরমন তৈরি করতে সাহায্য করে। শিশুরা নিয়মিত দুধ খেলে দ্রুত শরীরের বৃদ্ধি ঘটে। বাচ্চারা নিয়মিত দুধ খেলে দৃষ্টিশক্তি, ও শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি হয়। গরুর দুধে বিদ্যমান ভিটামিন শিশুদের শরীরকে সতেজ এবং প্রফুল্ল রাখে। নিয়মিত দুধ পান করলে শরীরে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। শিশুদের জন্য দুধ হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি

শিশুকে সুস্থ রাখতে শিশুদের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা অতুলনীয়। অনেকে বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি জানেন না। বিধায় পরিমাণ এর চাইতে বাচ্চাকে বেশি দুধ খাইয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। বাচ্চাদের ১ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত গরুর দুধ খাওয়ানো উচিত নয়। এক বছর বাচ্চার বয়স হলে অল্প মাত্রা করে দিনে দুইবার গরুর দুধ খাওয়ানো যায়। তবে বাচ্চার বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এর পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। প্যাকেট দুধের চাইতে গরুর তরল খাঁটি দুধ বাচ্চাকে খাওয়ালে আশা করি কোন সমস্যায় পড়বেন না।

৭ মাসের বাচ্চাকে গরুর দুধ খাওয়ানো যায়

অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন ৭ মাসের বাচ্চাকে গরুর দুধ খাওয়ানো যায়। গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণে কেসিন নামের প্রোটিন রয়েছে যা ১ বছরের নিচে বাচ্চাদের জন্য সহনীয় নয়। এক্ষেত্রে আপনার শিশুর হজমের সমস্যা হতে পারে। গরুর দুধে জীবাণু থাকতে পারে যা ছোট শিশুরা হজম করতে পারে না এর ফলে ডায়রিয়ার মত সমস্যা হয়। তাই এক বছরের নিচে বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।

গরুর দুধে পানি মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

গরুর দুধে পানি মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন। শিশুদের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা প্রচুর। শুধু খাঁটি গরুর দুধ ফুটানোর সময় পানি না মেশালে দুধের ঘনত্ব বেশি থাকে এই দুধ বাচ্চাদের খাওয়ালে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। যাদের দুধ খেলে এসিডিটি বৃদ্ধি পায় তারা দুধের সাথে পানি মিশিয়ে খেতে পারেন। 

এতে দুধের ঘনত্ব কম হবে এবং স্বাদ একটু পানসে হবে কিন্তু দুধে বিদ্যমান ভিটামিনের পরিমাণ একই থাকবে। তাই বাচ্চাদের বেশি ঘনত্বের দুধ খাওয়ানোর চাইতে বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি জেনে দুধ খাওয়ানো উচিত। এতে বাচ্চা হজমের মত সমস্যা থেকে দূরে থাকবে।

গরুর দুধ জ্বাল দেওয়ার নিয়ম

দুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই দুধ ভালো ভাবে জ্বাল দিয়ে নিতে হবে। গরুর দুধে বেশি জ্বাল দিলে দুধের গুণগত মান নষ্ট হয়। এছাড়া দুধের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় দুধের স্বাদ বিদঘুটে হয়ে যায়। দুধ জ্বাল দেওয়ার সঠিক উপায় না জানার কারণে অনেকেই দুধের পুষ্টিগুণ থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছেন। দুধ খাওয়ার পরে সঠিক পুষ্টিগুণ পাচ্ছেন না। 

দুধ জ্বাল দেওয়ার সময় দুধের পরিমাণের চার ভাগের এক ভাগ পানি মেশাতে হবে। দুধ জ্বাল করে যতটুকু পানি দিয়েছিলেন ততটুকু পানি কমিয়ে ফেলতে হবে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় দুধ জ্বাল দেওয়া যাবে না। দুধ জ্বাল দেওয়ার জন্য মধ্যম তাপমাত্রা রাখতে হবে। দুধ জ্বাল দেওয়া শেষে দুধ ঠান্ডা করে পান করুন।

বাচ্চার গরুর দুধে এলার্জি হলে কিভাবে বুঝবো?

শিশুদের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা প্রচুর দুধে পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় বাচ্চা থেকে বয়স্করা সকলে দুধ খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু কিছু বাচ্চাদের গরুর দুধ খেলে এলার্জি হয়। বাচ্চার গরুর দুধে এলার্জি হলে কিভাবে বুঝবেন তা হল হঠাৎ করে শিশুর শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া। শরীরের বিভিন্ন অংশে লাল হয়ে চুলকানি অনুভব করা। বমি অথবা ডায়রিয়া পেট ব্যথা হওয়া। শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যাওয়া। আপনার বাচ্চার এই লক্ষণ গুলো দেখলে বুঝবেন আপনার বাচ্চার গরুর দুধে এলার্জি রয়েছে। তাই বাচ্চাকে অল্প বয়সে গরুর দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।

গরুর দুধ কি বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর?

গরুর দুধ বাচ্চাদের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয় তবে অল্প বয়সী শিশুর জন্য কিছুটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দুই বছরের বাচ্চাদের জন্য গরুর দুধ খাওয়ানো সবচেয়ে উপযোগী। তবে এক বছর বা এর নিচে বাচ্চারা দুধ খেলে কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণে কেসিন রয়েছে যা অল্প বয়সের বাচ্চারা খেলে পেট ফেপেঁ যেতে পারে এবং বদহজম হতে পারে। কম বয়সে বেশি পরিমাণ গরুর দুধ খেলে বাচ্চা বড় হলে অধিক স্বাস্থ্যবান হয় ফলে ডায়াবেটিসের মত সমস্যা দেখা দেয়। তাই সঠিক বয়সে বাচ্চাকে সঠিক নিয়মে দুধ খাওয়ানো উচিত।

গরুর দুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

শিশুদের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা ও সকল বয়সের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে গরুর দুধের উপকারিতা প্রচুর। গরুর দুধ পরিমান মত খেলে গরুর দুধের তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেলে শরীরের চুলকানির মত সমস্যা দেখা দেয়। গরুর দুধে ল্যাকটোজের পরিমাণ বেশি থাকে যা বয়স্কদের ক্ষেত্রে হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। নোংরা অবস্থায় গরুর দুধ সংগ্রহ করলে ডায়রিয়া ও পেট ব্যথা হতে পারে। তাই গরুর দুধ সংগ্রহের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে দুধ সংগ্রহ করা প্রয়োজন।

লেখকের মন্তব্য

গরুর দুধের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের উদ্দেশ্যে লেখা। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন। শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সের লোকের জন্য গরুর দুধ অত্যন্ত উপকারী খাবার। তবে প্রত্যেকটি জিনিস নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত। 

পরিমাণের চাইতে বেশি দুধ পান করলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি মেনে দুধ খাওয়ানো উচিত। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

প্রিয় টপিকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url