ভৃঙ্গরাজ তেল তৈরির নিয়ম - ভৃঙ্গরাজ চুলের যত্নে
ভৃঙ্গরাজ তেল তৈরির নিয়ম জানলে আপনি বাজারে এই তেল না কিনে ঘরোয়া ভাবে তেল প্রস্তুত করতে পারবেন। ভৃঙ্গরাজ তেল ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ভৃঙ্গরাজ প্রাচীন কাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভৃঙ্গরাজ চুলের জন্য কতটা উপকারী থাকছে এই সম্পর্কে বিস্তারিত।
চুলের যত্নে ভৃঙ্গরাজের তেল অত্যন্ত উপকারী। মাথার বিভিন্ন সমস্যা দূর করার পাশাপাশি এটি চুলের অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। ভিঙ্গরাজের তেল চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ভৃঙ্গরাজ তেল তৈরির নিয়ম - ভৃঙ্গরাজ চুলের যত্নে
.
ভূমিকাঃ
ভৃঙ্গরাজ একটি ঔষধি উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদটি সবুজ ঘাসের মতো যেখানে সেখানে জন্মায়। তবে এর রয়েছে নানাবিধ ঔষধি গুনাগুন। ভৃঙ্গরাজ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহু আগে থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি চুল,ত্বক, হাড়ের চিকিৎসায়, পেটের সমস্যায়, হজম শক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
এছাড়া ভৃঙ্গরাজ গুড়ো কৃমির ঔষধ হিসেবে ভালো কাজ করে। ভৃঙ্গরাজ তেল তৈরির নিয়ম, ভৃঙ্গরাজ চুলের যত্নে কতটা উপকারী এবং ভৃঙ্গরাজ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটিতে থাকছে নানাবিধ প্রশ্নের উত্তর। ভৃঙ্গরাজ সম্পর্কে আপনার অজানা প্রশ্নের উত্তর জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভৃঙ্গরাজ তেল
ভৃঙ্গরাজ তেল চুলের যত্নের পাশাপাশি স্কিনের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। এটি চুলের যত্নে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভৃঙ্গরাজের তেল বাতের ব্যথা দূর করতে ভালো কাজ করে। ভৃঙ্গরাজের রস পুরাতন কাশি, শ্বাসকষ্ট, দূর করতে সাহায্য করে। ঘরোয়া ভাবে প্রস্তুতকৃত ভৃঙ্গরাজের তেল লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
অতিরিক্ত কৃমি দূর করতে ভৃঙ্গরাজের রস অত্যন্ত উপকারী। এই তেলে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল, এন্টিফাঙ্গাল উপাদান যার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
ভৃঙ্গরাজ তেল তৈরির নিয়ম
অনেকে প্রশ্ন করেন ভৃঙ্গরাজ তেল কিভাবে বানাবো। আপনি যদি ঘরোয়াভাবে ভৃঙ্গরাজের তেল প্রস্তুত করতে পারেন সেক্ষেত্রে বাজারে কেনা তেলের চাইতে আপনার তেল হবে অত্যন্ত কার্যকরী। আপনার পছন্দ অনুযায়ী ভৃঙ্গরাজের সাথে প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে ভৃঙ্গরাজ তেল তৈরি করতে পারেন। আপনি চাইলে শুধুমাত্র ভৃঙ্গরাজ তেল তৈরি করতে পারেন শুধুমাত্র ভৃঙ্গরাজ পাতার সাথে নারিকেল তেল মিশ্রিত করে।
এছাড়া চাইলে ভৃঙ্গরাজের পাতার সাথে প্রয়োজনীয় আরো অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে অতিরিক্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ ভৃঙ্গরাজ তেল প্রস্তুত করতে পারেন। ভৃঙ্গরাজ তেল তৈরির নিয়ম হলঃ প্রথমে ৫০০ গ্রাম পরিমাণ এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেল নিন। অথবা বিশুদ্ধ খাঁটি নারিকেল তেল নিন। ৫০০ গ্রাম তেলের সাথে ২০ গ্রাম পরিমাণ ভৃঙ্গরাজ পাতা সংগ্রহ করুন।
পাতাটি ধুয়ে পরিষ্কার করার পর একটি পাত্রে পরিষ্কার নারকেল তেলটি ঢেলে দিন। তেলের মধ্যে ভিঙ্গরাজের পাতা দিয়ে দিন। আপনি চাইলে এরমধ্যে মেথি বীজ, ও চুলের জন্য উপকারী আরো অন্যান্য উপাদান মেশাতে পারেন। এরপর হালকা তাপমাত্রায় পাত্রটি বসিয়ে দিন। ২০ মিনিট তাপ দেওয়ার পরে ভৃঙ্গরাজের পাতা কালকে আকার ধারণ করবে এবং তেল সবুজ রং গাঢ় আকার ধারণ করবে।
তখন তেলে তাপ প্রয়োগ করা বন্ধ করুন। এরপর তেল ঠান্ডা করার জন্য ২০ মিনিট রেখে দেন। ঠান্ডা হয়ে গেলে এই তেল পরিষ্কার সুতি কাপড়ে ছেঁকে নিন। অবশেষে কাচের বোতলে প্রক্রিয়াযাত করুন। এই তেল কমপক্ষে ছয় মাস ব্যবহার করতে পারবেন। আশা করি ভৃঙ্গরাজ তেল তৈরির নিয়ম সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।
ভৃঙ্গরাজ চুলের যত্নে
ভৃঙ্গরাজ চুলের যত্নে অত্যন্ত উপকারী। প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ও তেলের মাধ্যমে ভৃঙ্গরাজের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে। দীর্ঘস্থায়ী চুল পেতে ভৃঙ্গরাজ তেলের উপকারিতা প্রচুর। নিয়মিত চুলে ভৃঙ্গরাজের তেল ব্যবহার করলে চুলের নানাবিধ সমস্যা দূর হয়। ভৃঙ্গরাজের রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন।
রাস্তার আশেপাশে বাড়ির আনাচে কানাচে প্রাকৃতিক ভাবে এই উদ্ভিদটি জন্ম নেয়। চুলের যত্নে দীর্ঘদিন ধরে অনেকে ভৃঙ্গরাজের তেল ব্যবহার করে আসছেন। চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
ভৃঙ্গরাজ তেলের উপকারিতা
ভৃঙ্গরাজ তেল তৈরির নিয়ম ও ভৃঙ্গরাজ তেলের উপকারিতা প্রচুর। প্রাচীনকাল থেকেই চুলের যত্নে ভৃঙ্গরাজ তেলের ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে এ তেল কৃমিনাশক, অ্যান্টিসেপটিক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ভৃঙ্গরাজের তেল হাত-পা জ্বালাপোড়া, বাতের ব্যথায়, শরীরের ব্যথা দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকরী।
চুলের যত্নে ভৃঙ্গরাজ তেলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। চুলে ভৃঙ্গরাজ তেল ব্যবহার করলে যে উপকারিতা গুলো পাওয়া যায় নিম্নে তা দেওয়া হলঃ
- চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
- চুল পড়ে যাওয়া রোধ করে
- মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে
- অতিরিক্ত খুশকি দূর করে
- চুলের রুক্ষতা দূর করে
- চুল মজবুত করে
- চুলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে
- চুল ফাটা রোধ করে
- চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে
- চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায়
- চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
- চুলের উকুন নাশক হিসেবেও কাজ করে
- মাথার ত্বকের অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে
চুলের যত্নে ভৃঙ্গরাজ তেলের উপকারিতা প্রচুর যা বলে শেষ করার মত নয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার পাশাপাশি এই উদ্ভিদের আরো বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। প্রত্যেকের এই উদ্ভিদ সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই বিধায় এটি ব্যবহার করতে নারাজ।
ভৃঙ্গরাজ তেলের দাম
বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির ভৃঙ্গরাজ তেল পাওয়া যায়। এক এক কোম্পানির ক্ষেত্রে তেলের দাম এক এক রকম হয়। তবে গুণ ও মান নিজে যাচাই-বাছাই করার পরে তেল কিনবেন। অবশ্যই মানসম্মত ভালো কোম্পানির তেল কিনবেন যেটি আপনার কাছে ভালো বলে মনে হবে। নিম্নে বিভিন্ন কোম্পানির ভৃঙ্গরাজের তেলের দামের তালিকা দেওয়া হলঃ
- হামদর্দ ভৃঙ্গরাজ তেল ১৩০ মিলি ১৯০ টাকা
- হেকিমস ভৃঙ্গরাজ তেল ২০০ মিলি ৩৮৫ টাকা
- ওয়াও স্কিন সাইন্স ১০০ মিলি ৪৪৯ টাকা
- ভৃঙ্গরাজ অর্গানিক হেয়ার ওয়েল ২০০ মিলি ৫০০ টাকা
- ন্যাচার লাইফ ভৃঙ্গরাজ তেল ২০০ মিলি ২৪৪ টাকা
- পিওর খাদি ভৃঙ্গরাজ তেল ২১০ মিলি ৭০০ টাকা
- গ্যলওয়ে ভৃঙ্গরাজ তেল ২০০ মিলি ৩৬২ টাকা
বাংলাদেশ প্রস্তুতকৃত তেল গুলোর তুলনামূলক দাম কম কিন্তু যেগুলো বাইরের দেশ থেকে আমদানিকৃত সেগুলো তেলের তুলনামূলক দাম অনেক বেশি। আপনি চাইলে বাংলাদেশী কোম্পানির যেকোনো তেল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া আপনি যদি ভৃঙ্গরাজ গাছের সাথে পরিচিত হন সে ক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায়ে নিজেয় তেল প্রস্তুত করুন।
হামদর্দ ভৃঙ্গরাজ তেল
হামদর্দ কোম্পানির ভৃঙ্গরাজ তেল চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই তেল কেমিক্যাল মুক্ত। এরা নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষিত উপায়ে তেল প্রস্তুত করেছেন। এই তেল চুলের যত্নে অত্যন্ত উপকারী। হামদর্দের ১৩০ মিলি তেলের দাম ১৯০ টাকা। এই তেলের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে ব্যবহারে পূর্বে এর নির্দেশিকা অনুযায়ী এ তেল ব্যবহার করুন।
ভৃঙ্গরাজ গাছ চেনার উপায়
অনেকে ভৃঙ্গরাজ গাছ কেমন সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। ভৃঙ্গরাজ তেল তৈরির নিয়ম জানলেও ভৃঙ্গরাজ গাছ চিনেন না বিধায় এই মূল্যবান তেল তৈরি করতে পারছেন না। ভৃঙ্গরাজ গাছ বাড়ির আনাচে কানাচে আবাদি জমির আইলের ধারে জন্ম নেয়। এটি দেখতে সবুজ ঘাসের মতো উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদটির দুইটি প্রজাতি রয়েছে।
একটি প্রজাতি মাটির সাথে নেতিয়ে থাকে। অন্য প্রজাতিটি মাটি থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। দুইটি প্রজাতির পাতার ধরন একই রকম। কিন্তু পাতার আকার কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। দুই প্রজাতির ফুলের রং দুই রকম প্রথম প্রজাতির ফুলের রং হলুদ ও দ্বিতীয় প্রজাতির ফুলের রং সাদা। গ্রামের ভাষায় এটিকে ভৃঙ্গরাজ, কেশরাজ, কালোকেশি, কেশুতি নামে ডাকা হয়। আপনাদের চেনার সুবিধার্থে দুই প্রজাতির ভৃঙ্গরাজের ছবি নিচে দেওয়া হলঃ
লেখক এর মন্তব্য
ভৃঙ্গরাজ তেল তৈরির নিয়ম, ভৃঙ্গরাজ চুলের যত্নে কতটা উপকারী এ প্রসঙ্গে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন। আজকের আর্টিকেলটি তাদের উদ্দেশ্যে লেখা। এছাড়া চুলের যত্নে ভৃঙ্গরাজ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি। এ প্রসঙ্গে যদি আপনার আরো কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করুন। নিয়মিত এরকম আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটটি ভিজিট করুন। চুলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আমাদের সাইটে সার্চ করে আরো অন্যান্য পোস্টগুলো পড়তে পারেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।