অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ সপ্তম শ্রেণী - অতিপুষ্টি কি সম্পর্কে
অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ গুলো কি সে বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকলে আপনার শরীরে অপুষ্টি এবং অতিপুষ্টির লক্ষণ দেখে খুব সহজে প্রতিকার করতে পারবেন। অতিপুষ্টি কি, অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির পার্থক্য গুলো আলোচনা করা হলো।
অপুষ্টি এবং অতিপুষ্টি শরীরে বিভিন্ন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অপুষ্টির কারণে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়ে। শরীরে অপুষ্টি দেখা দিলে শরীরকে বিভিন্ন রোগবালায় আক্রমণ করে। এবং শরীরে রোগের বাসা তৈরি হয়।
পোস্ট সূচীপত্রঃ অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ - অতিপুষ্টি কি
.
ভূমিকাঃ
অপুষ্টি এবং অতিপুষ্টি সম্পর্কে সকলেরই সঠিক ধারণা নেই এর জন্য প্রত্যেকে জানেন না যে তিনি অপুষ্টি তে ভুগছেন না অতিপুষ্টিতে ভুগছেন। মানব শরীরে অপুষ্টির মত সমস্যা কেন হয় এবং কি কি খাবার খেলে শরীরে অতিপুষ্টি দেখা দেয়, অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ বিষয়ে আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির কি সম্পর্কে সকল প্রশ্নের উত্তর জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
অপুষ্টির কারণে কি কি হতে পারে
এদেশের অধিকাংশ লোক দারিদ্র হওয়ার কারণে সঠিকভাবে পুষ্টি জনিত খাবার খেতে পারেন না। এতে অপুষ্টি জনিত সমস্যায় শরীরে বিভিন্ন রোগব্যাধির বাসা তৈরি হয়। অপুষ্টিজনিত রোগ হলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন ভিটামিন আমিষ এবং শর্করার অভাবে অপুষ্টি জনিত সমস্যা দেখা দেয়। অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির লক্ষণ গুলো কি কি, অপুষ্টির কারণে কি কি হতে পারে সেগুলো হলো:
- রাতকানা রোগ
- ঠোঁটের কিনারায় ঘা হয়
- শরীরের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়
- গলা ফুলা রোগ দেখা দেয়
- হাড্ডি স্যার রোগ দেখা দেয়
- শিশুদের রিকেটস রোগ হয়
- স্কার্ভি রোগ হয়
- ক্ষয় রোগ হয়
- বেরিবেরি রোগ হয়
- মারাস্মাস রোগ হয়
- বৃদ্ধির ব্যাঘাত ঘটে
- অ্যানিমিয়া রোগের দেখা দেয়।
অপুষ্টির কারণে উল্লেখিত রোগের মত অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তবে সবচাইতে বেশি অপুষ্টি জনিত সমস্যা হলে উল্লেখিত রোগ গুলো দেখা দেয়।
অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ সপ্তম শ্রেণী ছক
অপুষ্টি ও অতি পুষ্টির শারীরিক লক্ষণ সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখিত অপুষ্টি ও অতিপুষ্টি সমাধান সম্পর্কে অনেক শিক্ষার্থী জিজ্ঞেস করেন। অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির লক্ষণ গুলো কি কি, নিচে অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ সপ্তম শ্রেণীর ছকের উত্তর দেয়া হলো:
আমাদের চারপাশে অপুষ্টি ও অতিপুষ্টি সম্পন্ন বিভিন্ন মানুষ দেখে থাকি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নিচের ছকে অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ দেওয়া হল:
অপুষ্টি
- শরীর বৃদ্ধির ব্যাঘাত ঘটে
- বেরি বেরি রোগ হয়
- শিশুদের রিকেটস রোগ হয়
- গলা ফুলা রোগ দেখা দেয়
- ঠোঁটের কিনারায় ঘা হয়
- শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়
- শরীরে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়
অতিপুষ্টি
- শরীরে খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়
- শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি হয়ে।
- হৃদরোগ, অ্যাজমা, ডায়াবেটিসের মতো রোগ দেখা দেয়
- কাজ করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
- স্মরণশক্তির লোভ পায়।
- মানসিক স্বাস্থ্য বিদঘুটে হয়ে যায়।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ সপ্তম শ্রেণী
অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে যে লক্ষণগুলো দেখলে বোঝা যায় যে একটি রোগী অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছে কি অতি পুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছেন। অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির লক্ষণ গুলো কি কি সে বিষয়ে একটি তালিকা দেওয়া হল।
অপুষ্টির লক্ষণ সমূহ:
- শরীর দুর্বল হয়ে যায়
- শরীরের ওজন কমে যায়
- হজম শক্তি কমে যায়
- শরীরের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়
- মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে
- রাতকানা রোগ হয়
- চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়
- খাবারে অরুচি ভাব দেখা দেয়
- কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়
- শরীরের ক্লান্তি ও অবসাদ দেখা দেয়
- মেজাজ খিরখিটে হয়ে যায়
- স্মৃতিশক্তি কমে যায়
অতিপুষ্টির লক্ষণ সমূহ:
- শরীরের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়
- খাবারের রুচি বৃদ্ধি পায়
- শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়
- ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা দেখা দেয়
- হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা দেখা দেয়
- বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়
- শরীরে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
- শরীর অতিরিক্ত অলস হয়ে যায়
উল্লেখিত বিষয়গুলো অপুষ্টির জন্য মানব শরীরে দেখা দেয়। ও নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অতিপুষ্টির জন্য শরীরে সমস্যার সৃষ্টি করে। আশা করি অপুষ্টির এবং অতিপুষ্টির লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন।
অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির পার্থক্য
অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির ফলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির লক্ষণ গুলো কি কি সে বিষয়ে সঠিক ধারণা নিয়ে অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির বিষয়ে সচেতন হয়ে শরীরকে সুস্থ রাখা সম্ভব। অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ সপ্তম শ্রেণী ও অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির পার্থক্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
অতিপুষ্টি কি
অতিপুষ্টি কি অপুষ্টি অনেকেই এ বিষয়ে জানেন না। এ বিষয়ে জানতে হলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে অতিপুষ্টি কি এবং অপুষ্টি কি। অতিপুষ্টি হল পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করার পর শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণ চাহিদা পূরণের পর যে পুষ্টি শরীরে অতিরিক্ত বাড়তি হিসেবে জমা থাকে সে পুষ্টিকে অতিপুষ্টি বলা হয়।
অন্যদিকে অপুষ্টি হল শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন আমিষ এবং শর্করা চাহিদা থাকার পরও শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাইনা বা ঘাটতি থাকে এমন অবস্থাকে অপুষ্টি বলে। অপুষ্টি হল শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি উপাদান। অন্যদিকে অতিপুষ্টি হল শরীরে ভিটামিনের বাড়তি উপাদান। অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির লক্ষণ গুলো কি কি সে বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকলে শরীরকে অতিপুষ্টি ও অপুষ্টি থেকে সুস্থ রাখা সম্ভব।
সুতরাং বলা যায় অতিপুষ্টি অপুষ্টি নয়। তাই অতিপুষ্টি কি সে বিষয়ে আপনি যদি আগে থেকেই সচেতন হতে চান তাহলে আপনাকে অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন।
অতিপুষ্টির ফলে কী কী রোগ হয়
একজন ব্যক্তি অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ দেখে খুব সহজে বোঝা যায়। শরীরে অতি পুষ্টির ফলে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। কমবেশি প্রত্যেকটি বয়সের লোকেরই অতিপুষ্টির ফলে শরীরে বিভিন্ন রকম রোগের সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে অতিপুষ্টির ফলে যে সকল রোগগুলো হয় তা হল:
- শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়
- শরীরে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পায়
- শ্বাসকষ্ট এবং এজমা দেখা দেয়
- স্মরণশক্তি কমে যায়
- শরীর অলস হয়ে যায়
- হার্টের সমস্যা দেখা দেয়
- ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা দেয়
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
- শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়
- স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়।
তাই উল্লেখিত রোগ গুলো থেকে শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য আপনাকে অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির লক্ষণ গুলো কি কি সে বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। তাহলে আপনি অপুষ্টি এবং অতিপুষ্টির সম্পর্কিত রোগ গুলো চিহ্নিত করতে পারবেন।
অপুষ্টিকর খাবার কি কি
কমবেশি প্রত্যেকেই পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে ধারণা রয়েছে কিন্তু অপুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে খুব কম লোকেরই ধারণা রয়েছে। অপুষ্টিকর খাবার মানব শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। অপুষ্টিকর খাবারের ফলে শরীর বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হয়। তাই প্রত্যেকেরই দায়িত্ব অপুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা থেকে সচেতন থাকা। অপুষ্টিকর খাবারগুলো হল:
- ক্ষতিকর চর্বি উপাদান
- পোড়া তেল
- খাবারে অতিরিক্ত লবণ
- ফরমালিন
- কার্বাইড জাতীয় খাবার
- ভেজাল খাদ্যদ্রব্য
- মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার
- দীর্ঘদিন ফ্রিজে রাখা খাবার
- প্যাকেট অথবা বোতল জাত ফলের রস
- কৃত্রিম রং মিশ্রিত খাবার
- বিভিন্ন ধরনের ফরমালিন মিশ্রিত খাবার
- অস্বাস্থ্যকর খাবার
উল্লেখিত খাবার গুলো অপুষ্টিকর খাবার এর তালিকায় পড়ে। পুষ্টিকর খাবার সংরক্ষণের অভাবে অথবা ফরমালিন ব্যবহারের ফলে, এছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে সে খাবারগুলো অপুষ্টিকর খাবারের তালিকায় পড়ে। তাই প্রত্যেকটি ব্যক্তির দায়িত্ব শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির লক্ষণ গুলো কি কি সে বিষয়ে সচেতন থাকা। তাহলে শরীরকে সুস্থ রাখা সম্ভব।
লেখক এর মন্তব্য
অনেকেই অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ সপ্তম শ্রেণী গুলো কি ও অতিপুষ্টি কি সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে থাকেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের উদ্দেশ্যে লেখা। আজকে অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির সকল বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে প্রত্যেকেরই উচিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন, এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল নিয়মিত পেতে আমাদের সাইটটি ভিজিট করুন ধন্যবাদ।