প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয় এই বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আপনি নিমপাতা কেন খাবেন? আমরা আরো আলোচনা করেছি নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয়।
নিমপাতা হাজারো রোগের ঔষধ। নিম পাতা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় নিম পাতার রস সেবন করা কতটুকু উপকারী এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনাকে জানতে হলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সূচিপত্রঃ
ভূমিকাঃ
নিম বলতে সাধারণত সবাই ছোট্ট একটি ফল যা খেতে অতিরিক্ত তিতা বলে জেনে থাকি। যা আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে অধিক পরিমাণে জন্মায়। নিমের রয়েছে হাজারও ঔষধি গুনাগুন যা বলে শেষ করার মতো নয়।
নিম পাতা থেকে কি কি ওষুধ তৈরি হয়
নিম গাছ হচ্ছে একটি মহৌষধি গাছ। নিম গাছ এবং এর পাতা থেকে তৈরি হয় হাজারো ঔষধ। এই বৃক্ষের ঔষধ মানুষ ৪ হাজার বছরের পূর্বে থেকে ব্যবহার করে আসছে। নিম গাছের সকল ঔষধি গুনাগুন নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- খোস পাচড়া চুলকানি নিরাময় করে
- একজিমা ও ফোড়া নিরাময় করতে সাহায্য করে
- এলার্জি সমস্যায় নিমপাতা ব্যবহারিত হয়
- আজীর্ণ হলে নিমপাতা খেলে এর সমাধান হয়
- ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া দূর করে
- ছত্রাকের ইনফেকশন দূর করে
- ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে
- চোখের চুলকানি হলে চুলকানি দূর করে
- বাত ব্যথায় নিমপাতা বাকল কাজে লাগে
- ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিরোধ করে
- জন্ডিস রোগের ঔষধে ব্যবহৃত হয়
- রক্ত পরিষ্কার করে
- মাথার খুশকি বিনাশে কাজ করে
- মাথার চুল পড়া রোধ করে
- রূপচর্চার জন্য নিমপাতা ব্যবহৃত হয়
- কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে
এছাড়াও নিমপাতা আরো হাজারো রকমের ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যা বলে শেষ করার মত নয়।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
নিম পাতার রস প্রতিদিন খেলে ক্ষতি হবে
নিম পাতার রস প্রতিদিন খেলে ক্ষতি হবে কি এই বিষয়ে সকলে প্রশ্ন করেন এর উত্তর হচ্ছে না। ব্লাড সুগারে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২০টি নিম পাতা চিবিয়ে খেলে উপকার হয় যাদের পেটের পীড়া ও কৃমির সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন সকালে নিমপাতার রস অথবা নিমপাতা চিবিয়ে খেলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে সবচাইতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
প্রতিদিন কতটুকু নিম পাতা খাওয়া উচিত
চিকিৎসক দের মতে প্রতিদিন সকালে নিম পাতা খেলে শরীরের অর্ধেক রোগ সুস্থ হয়ে যায়। প্রতিদিন সকালে ১৫ থেকে ২০ টি নিমপাতা চিবিয়ে খেতে হবে। অবশ্যই নিমপাতার সাথে চিনি খাওয়া যাবেনা। এক কাপ নিম পাতায় থাকে ৩৫ গ্রাম কিলো ক্যালরি। নিম পাতা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিদিন সকালে নিম পাতা খেলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কাদের নিম খাওয়া উচিত নয়
নিম পাতা সবাই খেতে পারে কিন্তু একটানা দুইদিন দিনের বেশি এই পাতা খাওয়া উচিত নয়। অর্থাৎ সপ্তাহে দুইবার কেননা নিম পাতা অতিরিক্ত খেলে ছেলেদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর বিস্তার ব্যাহত হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে।
নিমের উপকারিতা কি
নিমের রয়েছে হাজারো উপকারিতা নিম পাতার রস কৃমি নাশক হিসেবে কাজে লাগে। রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে মাথার চুল পড়া রোধ করে উকুন বিনাশের সহযোগিতা করে মাথার খুশকি দূর করে শরীরের ওজন কমাতে সহযোগিতা করে। আপনি যদি নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলের উপরের পয়েন্টটি পড়তে পারেন নিম পাতা থেকে কি কি ওষুধ তৈরি হয়।
নিম পাতার ব্যবহার
অনেক রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিমপাতা ব্যবহার হয়ে থাকে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যোগ্য হল কৃমিনাশক হিসেবে নিম পাতার ব্যবহার হয় বেশি। নিম পাতা বেটে হলুদের সাথে ত্বকে ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ দূর হয়। নিম পাতার রস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে গোসল করলে শরীরের জীবাণু পরিষ্কার হয় এবং চুলকানি দূর হয়। তাছাড়া যাদের শরীরে ঘামের কারণে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হয় এরা নিম পাতার রস দিয়ে গোসল করলে এ রোগের প্রতিকার মেলে।
নিম কি ত্বকের জন্য ভালো
নিম কি ত্বকের জন্য ভালো, নিম বা নিমপাতায় রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল যা তকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সহযোগিতা করে। নিমপাতা বেটে এর রস পানির সাথে মিশিয়ে গোসল করলে শরীরের চুলকানি দূর হয়। এবং শরীর তেলতেলে ভাব ও পরিষ্কার করতে সহযোগিতা করে। মুখে ব্রনের দাগ হলে নিয়মিত নিম পাতার ব্যবহারে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়।
নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয়
নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে মুখের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ একসাথে পেস্ট তৈরি করে মুখে ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা দূর হয়। মুখের তেলতেলে ভাব দূর করে। যদি মুখে ব্রনের দাগ থাকে তাহলে দাগ সরাতে সহযোগিতা করে। তাছাড়া নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে আপনার মুখের ছোপ ছোপ দাগ দূর করে
নিম পাতা কখন খাওয়া উচিত
নিম পাতা খাওয়ার সঠিক সময় হচ্ছে সকাল বেলা। যারা নিমপাতা চিবিয়ে খেতে পারে না তারা তিন থেকে চার ঘন্টা নিম পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা খালি পেটে খেতে পারেন। নিম পাতাতে উপস্থিত গুনাগুন এসিডিটিতে খুবই উপকারী। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে ব্যথা নিরাময় হয়। তাছাড়া নিম পাতাতে বিদ্যমান ভিটামিন মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে পেটের সমস্যা দূর হয়। যাদের অতিরিক্ত কৃমি সমস্যা রয়েছে এই ক্রিমি সমস্যা দূর হয়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে ওজন কমাতে সহযোগিতা করে।
আরো পড়ুনঃ মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট এর উপকারিতা
আপনি নিয়ম মেনে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিমপাতার রস খেলে রক্ত পরিষ্কার এবং রক্তকে সচল রাখেতে পারবেন । ঠান্ডা জনিত সমস্যা বুকে ব্যথা হলে সঠিক নিয়মে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে এর সমাধান মিলবে
নিম কতদিন খাওয়া উচিত
কোন রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে নিম কতদিন খাওয়া উচিত তা হল পেটের কোন সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ নিম পাতার রস সাতদিন খাওয়া উচিত। তবে পেটের এক এক রকমের সমস্যার জন্য এক এক রকমের নিয়ম মেনে নিমপাতা রস খেতে হয়। যেমন কৃমি নাশকের জন্য এক থেকে দুই দিন খাওয়া উচিত। অন্যদিকে হজমের সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বনিম্ন সাত দিন নিম পাতার রস খেতে হয়।
প্রতিদিন নিম চা খাওয়া যাবে কি
নিম একটি ঔষধি গাছ এর জন্য বাজারে এ নিমের চা কিনতে পাওয়া যায়। নিম এর চা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। অসুস্থতায় মিমের চা সেবন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে এটা চিনি ছাড়া খেতে হবে।
প্রতিদিন কতটুকু নিম পানি পান করা উচিত
অনেকেই এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী যে প্রতিদিন কতটুকু নিম পানি পান করা উচিত সবচাইতে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রতিদিন সকালে ২৫০ গ্রাম পানির সাথে নিম পাতা ভিজিয়ে রেখে অথবা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে নিম পাতার রস খেলে অনেক উপকার মিলে । অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়া ভালো নয় তাই এর নিয়ম মেনে সবকিছু ব্যবহার করা উচিত।
লেখকের মন্তব্য
যারা নিম গাছ এবং এর পাতা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী আজকের আর্টিকেলটিতে এই বিষয়ে সব কিছু আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা এই বিষয়গুলো পড়ে উপকৃত হবেন। প্রত্যেকটি ওষুধের যেমন একটি ভাল দিক রয়েছে তেমনি এর অতিরিক্ত সেবনে এর খারাপ দিক ও লক্ষ্য করা যায়। নিম পাতা রস বা কান্ড এর ব্যবহারবিধি মেনে এর ব্যবহার করা উচিত।
আপনার রোগ অনুযায়ী একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিম পাতার রস ব্যবহার করবেন। আমাদের আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন ধন্যবাদ।