মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা - কম খরচে মাছের খাবার তৈরি

মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা গুলো কি, এ বিষয়ে পুরো আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কম খরচে মাছের খাবার তৈরি করা যায় কিভাবে এই বিষয় নিয়ে পুরো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা - কম খরচে মাছের খাবার তৈরি
অনেকেই জীবিকা নির্বাহের জন্য, এবং নিজ উদ্যোগে সাফল্য লাভের আশায় মাছ চাষ করে থাকেন। মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য ছাড়াও পুকুরে আরো অন্যান্য খাবার দিতে হয়। মাছ চাষ করার জন্য মাছের খাদ্য তৈরীর ফর্মুলা গুলো কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ.

ভূমিকাঃ 

অনেকেই জীবিকা নির্বাহের জন্য এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য মাছ চাষ করেন। পুকুরে মাছের জন্য প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হয়। এই প্রাকৃতিক খাবারের বাইরে ও মাছ চাষ করার জন্য অতিরিক্ত কিছু খাবার দেয়া হয়। ঘরে মাছের খাবার তৈরি মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা মাছের প্রাকৃতিক খাবার তৈরির পদ্ধতি বিষয়ে চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য কাকে বলে

মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য কাকে বলে আমাদের দেশে সাধারনত মৎস্য চাষীরা পুকুর, জলাশয়, খাল বিল, নদী নালা, হাওড়, এ মাছ চাষ করে থাকেন। পুকুরে অতিরিক্ত খাবার না দিয়ে সাধারণভাবে জলাশয় এর উর্বরতা তে যে খাবারগুলো তৈরি হয় তাই মাছের প্রাকৃতিক খাবার। জলাশয়ের উর্বরতার কারণে প্রাকৃতিকভাবে জলাশয় বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়ে থাকে।

মাছের প্রাকৃতিক খাবার তৈরির পদ্ধতি

মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা এবং কম খরচে মাছের খাবার তৈরি, মাছের প্রাকৃতিক খাবার তৈরির পদ্ধতি দেওয়া হল: পুকুর প্রস্তুতির পূর্বে পুকুরে প্রতি শতক হারে ১ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে। এরপর পুকুরের পানি পরিষ্কার হলে প্রতি শতক হারে ১০ কেজি গোবর সার, ১০ কেজি কম্পোস্ট সার, ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, টিএসপি ২০০গ্রাম, ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে পুরো পুকুরে ছিটাতে হবে। পুকুরে তৈরিকৃত উপকরণ গুলো দেয়ার ১৫ দিন পরেই প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হবে।

মাছের প্রধান প্রাকৃতিক খাবার কোনটি

জলাশয় অনেক ধরনের প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হয়। কিছু প্রাকৃতিক খাবার খালি চোখে দেখা যায় এবং কিছু প্রাকৃতিক খাবার খালি চোখে দেখা যায় না। জলাশয়ের গভীরে শ্যাওলা, সবুজ ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ, কাদা, পুকুরে তৈরিকৃত জৈব সার, কচুরিপানা, ইত্যাদি খাবারগুলো প্রাকৃতিকভাবে পুকুরে জন্ম নেয়।

কিন্তু মাছের প্রধান প্রাকৃতিক খাবার হল জুপ্লাংটন, পুকুরে কিছু রাসায়নিক খাবার প্রয়োগ করার পর এই জুপ্লাংটন গুলো তৈরি হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলজ পোকা দেখতে সবুজ বর্ণের। জুপ্লাংটন মাছের প্রধান প্রাকৃতিক খাবার।

কম খরচে মাছের খাবার তৈরি

কম খরচে মাছের খাবার তৈরি করার জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে। মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা মেনে কম খরচে মাছের খাবার তৈরি করা যায়। কম খরচে মাছের খাবার তৈরির পদ্ধতি নিচে দেওয়া হল:
  • সরিষার খৈল
  • সয়াবিন খৈল
  • তিলের খৈল
  • ভুট্টা ভাঙ্গা
  • গমের ভুসি
  • চালের কুড়া
  • শুটকির গুড়া
  • চিটাগুড
  • খনিজ লবণ
  • আটা
  • ফিস মিল
ইত্যাদি উপকরণগুলো দিয়ে কম খরচে মাছের খাবার তৈরি করা যায়। পুকুরে মাছের পরিমাণ অনুযায়ী খাবারগুলো পরিমাণ মতো একত্রে মিশিয়ে নিয়মিত পুকুরে ছিটাতে হবে।

গোবর দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি

গোবর দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি করার জন্য মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা জেনে খাদ্য তৈরি করা যায়। প্রথমে ৩৩ শতাংশ পুকুরের জন্য দশ মন গোবর, ১০ কেজি ইউরিয়া সার, ৫ কেজি টিএসপি সার, ৫ কেজি সরিষার খৈল একত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি ছোট গর্ত করে সেই গর্তে সকল উপাদান গুলো ঢেলে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
অবশ্যই স্থানটির উপরে ছাউনি দিতে হবে। রোদ অথবা বৃষ্টির পানি সেখানে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। ১৫ থেকে ২০ দিন পর এই খাবারগুলো পুকুরে পরিমাণ মতো ছেটানো যাবে। এতে মাছের সহজে স্বাস্থ্য বৃদ্ধি হবে, এবং ওজন বৃদ্ধি পাবে।

মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য কি

একটি জলাশয়ে পানির উর্বরতার ফলে যে খাবারগুলো তৈরি হয় তাই মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য । মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যগুলো বিভিন্ন রকমের হতে পারে যেমন: শেওলা, কচুরিপানা, শৈবাল, ক্ষুদ্র জল উদ্ভিদ, জুপ্ল্যাংটোন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলজ পোকা, পুকুরের তলদেশের উর্বর মাটি মাছের প্রাকৃতিক খাবার।

মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য কত প্রকার

মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য কত প্রকার এ বিষয়ে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন। মাছের প্রাকৃতিক খাবার অনেক প্রকার হয়ে থাকে। কিছু প্রাকৃতিক খাবার পুকুরে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়। এবং কিছু প্রাকৃতিক খাবার পুকুরের রাসায়নিক সার প্রয়োগ করার মাধ্যমে তৈরি করতে হয়। যেমন: জুপ্ল্যাংটোন

যা মাছের প্রধান প্রাকৃতিক খাবার। মাছ চাষ করে প্রাকৃতিক খাদ্য খাইয়ে মাছ চাষ করে অনেক লাভবান হওয়া যায়। তাছাড়া পুকুরে মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা বুঝে পুকুরে খাবার প্রয়োগ করলে দ্রুত মাছ চাষে সফলতা পাওয়া যায়।

মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা

অনেকেই মাছ চাষ করে থাকেন আর্থিকভাবে উন্নতির জন্য এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য। প্রাকৃতিক খাবারের বাইরেও তারা পুকুরে বিভিন্ন ধরনের বাড়তি খাবার দিয়ে থাকে কিন্তু মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা না মেনে পুকুরে খাবার প্রয়োগ করার ফলে পুকুরে অতিরিক্ত খাবার নষ্ট হয়। মাছ চাষের জন্য মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা বুঝে মাছকে খাদ্য দিলে অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা নিম্নে দেওয়া হল:
প্রতি ১০০ পিস ধানি পোনার জন্য
  • সরিষার খৈল ৫০০ গ্রাম
  • ফিস মিল ৫০০ গ্রাম
  • চালের কুড়া ১ কেজি
  • চিটাগুড় ৫০০ গ্রাম
  • খনিজ লবণ ১০০ গ্রাম
  • আটা ১ কেজি
  • শুটকির গুড়া ১০০ গ্রাম
  • তিলের খৈল ১০০ গ্রাম
  • সয়াবিন খৈল ১০০ গ্রাম
  • ভুট্টা ভাঙ্গা ১ কেজি
উল্লেখিত উপাদানগুলো মাছের জন্য প্রতি ১০ দিন পর পর পুকুরে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এতে মাছের দ্রুত বৃদ্ধি হবে। তবে একজন সফল মাছ চাষী হওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা মেনে মাছ চাষ করলে অধিক লাভবান হবেন।

ঘরে মাছের খাবার তৈরি

আপনি খুব সহজেই ঘরে মাছের খাবার তৈরি করতে পারেন। কম খরচে মাছ চাষের জন্য ঘরে মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা গুলো হলো গমের ভুসি, চালের ভাঙ্গা, আটা, সরিষার খৈল, শুটকির গুড়া, চিটাগুড় চালের কুড়া, আপনার জলাশয়ের মাছের সংখ্যা ও পরিমাণ অনুযায়ী সবগুলো উপাদান পরিমাণ মতো  দিতে পারেন এতে আপনার মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

মাছের পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য কিভাবে তৈরি হয়

বিভিন্নভাবে মাছের পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়। একটি জলাশয় সূর্যের আলো নিয়মিত পৌঁছালে সেই পুকুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হয়। পুকুরের রোদ পৌঁছালে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী পুকুরে শ্যাওলা, জলজ উদ্ভিদ, প্লাংটন কম্পোস্ট জাতীয় খাবার তৈরি হয়।

পুকুরের আশেপাশে গাছ থাকলে গাছের পাতা পানিতে পড়লে তা থেকে খাবার তৈরি হয়। তাছাড়া পুকুরে পরিমাণ মতো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে জুপ্লাংটন নামের ক্ষুদ্র জলের সবুজ পোকা যা মাছের প্রধান প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হয়।

মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির জন্য কোনটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ

মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির জন্য সূর্যের আলো, এবং রাসায়নিক সার অধিক গুরুত্বপূর্ণ, কেননা পুকুরের রোদ না পৌঁছালে কোন প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হয় না, পুকুরের পানিতে সূর্যালো না পৌঁছালে পুকুরের নিচে কোন শৈবাল ও উদ্ভিদ জন্মায় না।

অন্যদিকে পুকুরের রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করলে মাছের প্রধান খাবার জুপ্ল্যাংটোন জন্মায় না। তাই পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির জন্য রাসায়নিক সার ও সূর্যের আলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য

মাছ চাষে সফলতা অর্জন করার জন্য এবং অধিক লাভবান হওয়ার জন্য সঠিক নিয়মে মাছ চাষ করা উচিত। বাড়তি খরচ ও অতিরিক্ত খাবারের বিষয়ে এড়াতে মাছের খাদ্য তৈরীর ফর্মুলা মেনে মাছ চাষ করলে সহজে লাভবান হওয়া যায়। তাছাড়া কম খরচে মাছের খাবার তৈরি করে প্রাকৃতিকভাবে মাছ চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া যায়।

অনেকে মাছ চাষের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। আপনাদের এই বিষয়গুলো জানাতে পেরে আমরা খুব আনন্দিত। আমরা নিয়মিত আমাদের সাইটে সবার আগে সকল বিষয়ে পোস্ট আপলোড করে থাকি। আপনি যে কোন খবর বিষয়ে জানতে নিয়মিত আমাদের সাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

প্রিয় টপিকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url